দেড় বছর পর ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু হত্যার বিচার শুরু

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.07.20
Washikur-babu620.jpg ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু
পারিবারিক অ্যালবাম

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে হত্যার প্রায় দেড় বছর পর শুরু হলো ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম। এই নিয়ে দ্বিতীয় কোন ব্লগার হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে।

বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পাশাপাশি আগামী ৪ আগস্ট এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমান।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তিনজন আসামি কারাগারে আটক রয়েছে। এরা হচ্ছে; জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান ও সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে গতকাল তিনজনকেই আদালতে হাজির করা হয়। মামলার শুরু থেকেই বাকি দুই আসামি জুনেদ ওরফে জুনায়েদ আহমেদ ওরফে তাহের এবং আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহর পলাতক আছে।

এ বিষয়ে আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার বেনারকে বলেন, “উপস্থিত তিন আসামি আদালতের কাছে নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন।”

তবে আদালতের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় খরচে দুই পলাতক আসামির পক্ষে মামলা লড়তে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান সালাউদ্দিন।

ব্লগ, ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন ওয়াশিকুর বাবু। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন ২৭ বছরের এই যুবক।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই জনতার কাছে ধরা পড়ে মাদ্রাসাছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফুল। আর হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক আসামি সাইফুলকে।

পরে বাবু হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আটক সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বলেও জানিয়েছিল পুলিশ।

বাবুকে হত্যার পরদিন তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তাঁর ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ। তিনি চার জনকে আসামি করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

ঘটনার ছয় মাস পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর আনসারুল্লাহ বাংলা টীমের পাঁচ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, হত্যা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের কাজ করেছে পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ। মামলা প্রমাণে মোট ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

গত কয়েক বছরে একাধিক ব্লগার হত্যা হলেও এখন পর্যন্ত একটিমাত্র মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখিতে সক্রিয় আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হন ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই খুনের মামলার রায় ঘোষণা হয় গতবছর ৩১ ডিসেম্বর। রায়ে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

এদিকে জনতা আসামি ধরিয়ে দেওয়ার পরেও অভিযোগপত্র জমা দিতে প্রায় দেড় বছর পার করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সময়ক্ষেপণ জঙ্গিদের নতুন ঘটনা ঘটাতে সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বেনারকে বলেন, “সাধারণ জনগণ ওয়াশিকুর বাবুর খুনিদের আটক করে পুলিশে দিয়েছিল। এমন একটি মামলায় অভিযোগপত্র দিতে যদি দেড় বছর কেটে যায়, তাহলে সহজে অনুমান করা যায় অন্য মামলার কি অবস্থা হবে।”

জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বা নতুন অপরাধে জড়াচ্ছে—এমন তথ্য উল্লেখ করে ইমরান বলেন, “আটক জঙ্গিড়রা যাতে কোনোভাবে জামিন না পায় সে বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।