আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার নোটিশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.07.20
20160720-Diplomatic-Zone1000.jpg বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কার্যালয়। কূটনৈতিক পাড়া থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজনৈতিক দলের কার্যালয় সরানোর কথা বলছে সরকার।
ফোকাস বাংলা

রাজধনীসহ বিভিন্ন শহরের আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা ১২ হাজার ৯৫৭টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সরে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছে সরকার। নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে এসব প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

একই সঙ্গে আবাসিক এলাকায় থাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করা এবং এসব এলাকায় নতুন করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নবিষয়ক কমিটির এক সভায় গতকাল বুধবার এসব সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক এতে সভাপতিত্ব করেন।

‘‘মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অপরিহার্য ও কর্তব্য। আমরা শুধু নোটিশ দেব না, নোটিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে,” সাংবাদিকদের জানান সচিব আবদুল মালেক।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান না রাখার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

ইতিমধ্যে গুলশান, বনানী ও বারিধারাসহ ঢাকা উত্তরের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে এ রকম ৫৫২টি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রেস্তোরাঁ, হোটেল, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়, বনানীর জাতীয় পার্টির কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সব ধরনের রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া থেকে সরিয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক এলাকায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সমাবেশ মিছিল ও ঘেরাও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হচ্ছে।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বারের লাইসেন্স বাতিল করে সেগুলো অপসারণ করতে বলা হয়। নতুন করে কোনো বারের লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। সব গেস্টহাউস ও আবাসিক হোটেল বন্ধ করতে হবে। অনোনুমোদিত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান সরাতে হবে।

তখন শহর এলাকায় আবাসিক প্লট ও ভবন থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে ছয় মাস সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রিসভা। এই সময়ে বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো না সরালে সেগুলো উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।

“সব কটি সিটি কর্পোরেশনের আবাসিক এলাকায় থাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স আর নবায়ন করা হবে না। এগুলো বাতিল করা হবে। আর নতুন লাইসেন্স দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না,” বেনারকে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত।

কোথায়, কতগুলো প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ১২ হাজার ৯৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আবাসিক এলাকায় থাকা ৩ হাজার ১৫টি, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১ হাজার ১৩৭টি এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২ হাজার ৪০০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হয়েছে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ২৬টি, গাজীপুর ৩৭৬টি, কুমিল্লা ৪০টি, চট্টগ্রাম ১৫০টি, বরিশাল ৫৮টি, সিলেট ২৬টি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাঁচটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আবাসিক প্লট ও ভবনে থাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ৫ হাজার ৫৩৪টি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১১২টি এবং ফায়ার সার্ভিস ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৫১টি বার, ক্লাব ও রেস্তোরাঁকে নোটিশ পাঠিয়েছে। ঢাকার ৩৪টি চার ও পাঁচ তারকা হোটেলের বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কূটনৈতিক এলাকার সীমানা নির্ধারণ হবে

ঢাকার কূটনৈতিক এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কূটনৈতিক এলাকাকে একটি নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গুলশান থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং বনানী থেকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয় সরাতে হবে। এ ছাড়া ওই এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ছোট ছোট একাধিক কার্যালয় আছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুলশান এলাকার সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেন নতুনভাবে কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।

“আমরা অনেক আগে থেকেই কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব রাজনৈতিক কার্যালয়, বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ অন্যান্য স্কুল, কলেজ সরিয়ে নেওয়ার কথা বলে আসছি। পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে,” বেনারকে জানান ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

এদিকে গুলশান থেকে রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।

“আমি মনে করি না জাতীয় পার্টির কার্যালয় বনানীতে থাকার কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তা আমরা মেনে নেব,” বেনারকে জানান জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

এদিকে বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিলে বিএনপির নেতারা সরকারে এই সিগ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, একটি কার্যালয় সরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে স্তব্ধ করা যাবে না।

তখন ঢাকাসহ সারা দেশের ঘরে ঘরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় তৈরি হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।