বাস,লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের স্রোত

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.09
20160909-BD-Eid-Lnch1000.jpg ঈদে ঘরমুখো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চযোগে বাড়ি ফিরছে। সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে টানা ছয় দিনের ঈদের ছুটি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ঘরে ফেরার এই যাত্রা চলবে আরও কয়েক দিন।

কমলাপুর থেকে ট্রেন ও সদরঘাট থেকে লঞ্চ প্রায় সময়মতো ছেড়েছে। তবে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে দূরপাল্লার বাস সময়মতো আসেনি। এর ফলে বাসটার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন-চার ঘণ্টা পরে বাসে উঠতে হয়েছে অনে যাত্রীকে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থার হিসাবে, ঈদের আগে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ মানুষ পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়েন। এঁদের মধ্যে বাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ৪৫ লাখ মানুষ ঘরে ফেরেন। ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়েন পাঁচ লাখ মানুষ এবং ১২ লাখ মানুষ লঞ্চযোগে বাড়ি ফেরেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় বসবাস করেন এক কোটি ৪১ লাখ মানুষ। এই হিসাবে প্রায় অর্ধেক মানুষ ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়েন।

ফেরিঘাটে চার হাজার গাড়ি!

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করছে প্রায় চার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি ও আড়াই শতাধিক বাস।

প্রচণ্ড গরমে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত অনেকে রাস্তার পাশেই পরিবার নিয়ে বসে আছেন। কেউ কেউ সড়কের পাশে থাকা বাড়িগুলোতে ঢুকে পড়ছেন বিশ্রাম নিতে বা প্রাকৃতিক কাজ সারতে।

বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। আশপাশে খাবারের হোটেল না থাকায় খাবারও খেতে পারছেন না বেশির ভাগ যাত্রী।

স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, পাটুরিয়ার জিরো পয়েন্ট থেকে নবগ্রাম এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটারব্যাপী প্রায় দুই হাজার গাড়ি রাস্তার এক পাশে আটকে আছে। এর মধ্যে পাটুরিয়া-উথলি সংযোগ সড়কের আরসিএল মোড় থেকে ৫ নম্বর ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করছে। আরও এক হাজার গাড়ি আটকে আছে সংযোগ সড়কের নবগ্রাম-সইদাবাদ-নালী এলাকায়।

এ ছাড়া ৫ নম্বর ঘাট থেকে নালী-তেপরা সড়কের কয়ড়া এলাকা পর্যন্ত চার কিলোমিটারব্যাপী প্রায় দুই হাজার গাড়ি রাস্তার এক পাশে আটকে আছে। এর বাইরে পণ্যবাহী প্রায় ৩০০ ট্রাক ফেরি পার হতে না পেরে পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে থেমে আছে।

“দৌলতদিয়ার চারটি ঘাট একই সঙ্গে চালু না থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল।

তিনি বলেন, “পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়ায় চারটি ঘাটের মধ্যে শুধু ১ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে গাড়ি পার হচ্ছে। ৩ নম্বর ঘাটটি আংশিকভাবে চলছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে”।

এ ছাড়া ২ নম্বর ঘাটটিতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি ভিড়তে পারছে না বলেও জানান তিনি।

এদিকে পরিস্থিতির কারণে অনেক যাত্রী বাস বা গাড়িতে করে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা না করে বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছেন। তাঁরা ঘাট পর্যন্ত একটি বাসে এসে নেমে পড়ছেন। এরপর ফেরিতে উঠে অপর পাশে গিয়ে আরেকটি বাস ধরে কম সময়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

সদরঘাটে মানুষের চাপ

রাজধানীর সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। ঢাকা থেকে নৌপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এই ঘাট এখন ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে ঠাসা। প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ছেড়ে গেছে ২৬টি লঞ্চ; ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল প্রায় ৯০টি লঞ্চ।

ঈদের আগে সদরঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়ছে। ঈদ উপলক্ষে সদরঘাটে ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা জানিয়ে বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বেনারকে বলেন, “কোনো লঞ্চ যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিতে না পরে সেজন্য দুজন ম্যাজিস্ট্রেট তদারকি করছেন”।

সড়কপথে চরম ভোগান্তি

সড়কপথে ঈদের ‘আনন্দযাত্রা’ ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার সবগুলো মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে আছে।

তবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, তার কাছে যানজটের কোনো তথ্য নেই।

মন্ত্রী বলেন, “মহাসড়কে যানজটের কোন তথ্য নেই। তবে যেহেতু কোরবানি উপলক্ষে পশুবাহী গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করছে; সেহেতু গাড়িগুলো ধীর গতিতে চলছে।”

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে মানুষের চরম ভোগান্তি ছবি: নিউজরুম ফটো

ঈদের ছুটির প্রথম দিন শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু থেকে মেঘনা-গোমতী সেতু (দাউদকান্দি) পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনে ধীরগতির খবর পাওয়া গেছে।

ট্রেনের ছাদেও জায়গা নেই

রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। ট্রেনের দরজা-জানালা দিয়ে যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন, উঠছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন ট্রেনের ছাদে।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ঢল আসন না থাকলেও চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ ছবি: স্টার মেইল

ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যেন তিলধারনের জায়গা নেই। তবে বেশির ভাগ ট্রেনই সময়মতো গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্তী বেনারকে বলেন, “দু’একটি বাদে বেশির ভাগ ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে সময় মতো ছেড়েছে।”

ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

শুক্রবার সরকারি চাকুরেদের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক দিন আগেই ছুটি দিয়েছে।

শুক্রবার ঢাকার প্রধান সড়কগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে, রাজধানীতে ঢোকা ও বের হওয়ার পথগুলোতে। ঘরে ফেরা মানুষেরা ভিড় করেছেন গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, সদরঘাট ও কমলাপুরে।

এ ছাড়া শপিং মল ও মার্কেটগুলোর সামনেও ছিল ভিড়। তবে তা ঈদুল ফিতরের মতো নয়।

মঙ্গলবার উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। সোমবার পর্যন্ত মানুষ গ্রামে ফিরবে। যারা ঢাকা ছাড়ছেন তাঁরা পরিবার–পরিজনের সঙ্গে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করে আবার ঢাকা ফিরবেন—এই প্রত্যাশা করছেন দেশবাসী।

 

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।