পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি শহরমুখী হচ্ছেন
2016.10.19
বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি শহরমুখী হচ্ছেন। বড় বড় শহরগুলোতে জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল—ইউএনএফপিএ।
তৈরি পোশাক কারখানায় কাজের সুযোগ এর অন্যতম একটি কারণ বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিষয়টিকে নারীর ক্ষমতায়নের অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ায় গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাবে নারীরা শহরমুখী হচ্ছেন।
বুধবার ঢাকার পরিকল্পনা কমিশনের মিলনায়তনে প্রকাশিত জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণেরাই শহরের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এ ক্ষেত্রে ১০- ২৯ বছর বয়সী একশ জন পুরুষের বিপরীতে ১৬৭ জন নারী ঢাকা এবং ১৬৬ জন নারী চট্টগ্রামে প্রবেশ করে।
অনুষ্ঠানে গবেষক অধ্যাপক গ্যাভিন জোনস বলেন “ঐতিহাসিকভাবে বড় শহরগুলোতে অভিবাসন ছিল পুরুষ অধ্যুষিত। তবে এখন কিন্তু নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ।”
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে তৈরি পোশাক শিল্পে নারীদের জন্য কাজের সুযোগ থাকায় এর অন্যতম কারণ বলে তিনি জানান।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নও বেড়েছে। পুরুষের চেয়ে নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়েছে গেছে। সদ্য প্রকাশিত এ গবেষণা ফলাফল তারই প্রতিফলন মাত্র।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি হাসান খান বেনারকে বলেন, “এখন গ্রামের মহিলা মানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়। আগে পুরুষই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সেই চিত্র বদলেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নারীরাও সংসারে এখন সমান ভূমিকা রাখেন। এ জন্য শহরমুখী হতেও পিছপা হন না তাঁরা।”
এই বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে গেলেও কর্মসংস্থান বলতে যা বোঝায় তা এখনো শহরকেন্দ্রিক। বিশেষ করে তৈরি পোশাক। নারীরা পোশাক কারখানায় ব্যাপকভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু এগুলো শহরে হওয়ায় গ্রাম থেকে নারীরা শহরে চলে আসছে।”
তাঁর মতে, শুধু বড় বড় শহরে নয়, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দেশের সকল প্রান্তে কলকারখানা তৈরি করতে হবে। তবেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত সব ধরনের নারীদের শহরে ছুটতে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী ঢাকায় কাজের সন্ধানে আসা হাসিনা বেগমের সঙ্গে। কখনোই স্কুলের গণ্ডি না পেরোনো এই নারী নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বেনারকে বলেন, “হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়লে, সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। গ্রামে তেমন কাজ না পাওয়ায় শহরে চলে আসি।”
তিনি বলেন, “এখন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি, যা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখার খরচও চালাতে পারি।”
মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় আসা তামান্না নাসরিন বেনারকে বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার খরচ জোগানোর মতো অবস্থা ছিল না পরিবারের। তবে আমি ঝরে যেতে চাইনি। তাই সবার অমতে ঢাকায় চলে আসি।”
তিনি বলেন, “পড়ালেখা আর এগোতে পারিনি। তবে বউ পার্লারে কাজ নেওয়ায় আমি এখন স্বাবলম্বী। শহরে আসার এটাই সুফল, কোনো না কোনো কাজ জুটে যায়।”