অর্থদণ্ড দিয়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন চার বাংলাদেশি নাবিক

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.04.20
Bangladeshi-sailors-released620.jpg সমুদ্রে নাইজেরিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ।
অনলাইন

অবশেষে অর্থদণ্ড দিয়ে এক বছর পর মুক্তি পাচ্ছেন নাইজেরিয়ায় বন্দি থাকা বাংলাদেশি চার নাবিক ও প্রকৌশলী। জাহাজ থেকে আটক হওয়া এই চারজনের পরিবার ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বেনারকে এমনটাই জানিয়েছেন।

আর্থিক এ দণ্ডের পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ মার্কিন ডলার। তবে এ অর্থ সংগ্রহে এখনো প্রায় ১২ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। ফলে কিছুটা বিপাকে পড়েছে আটকৃতদের স্বজনেরা।

গত বছর মার্চে আটক হওয়া গ্রিসের পতাকাবাহী ওই জাহাজে চোরাই তেল ছিল বলে দেশটির আদালতে প্রমাণ হয়। তা ছাড়া জাহাজটির বৈধ কাগজপত্রও ছিল না। আর এ কারণেই জাহাজটিতে থাকা মোট ২১ জনের মধ্যে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের নয় নাবিক ও প্রকৌশলীকে জেল ও জরিমানা করা হয়।

জানা যায়, মেরামতের জন্য বেনিন বন্দরের ১০০ মাইলের মধ্যে রাখা ছিল গ্রিসের পতাকাবাহী জাহাজটি। নাইজেরিয়ার নৌ বাহিনী জাহাজটি নিজেদের সমুদ্রসীমায় নিয়ে তল্লাশি চালায়।

যেভাবে মুক্ত হচ্ছেন চার বাংলাদেশি

নাইজেরিয়ায় গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশিরা হলেন; সাতক্ষীরার জি এম শাহীনুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার শিবলী নোমান, ময়মনসিংহের জহিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ও শাহীনুল জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী। শিবলী নাবিক ও জহিরুল প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জাহাজটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনপ্রতি ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা পরিশোধ করে এই চার বাংলাদেশিকে মুক্ত করে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জরিমানার অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন পক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চারজনকেই দেশটির আদালত থেকে একসঙ্গে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি জরিমানার অর্থ পরিশোধের পর একেকজনকে মুক্ত করা হচ্ছে। এদের মধ্যে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে মুক্তি পেতে পারেন জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী জি এম শাহীনুল ইসলাম। এরপরেই মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে রফিকের।

জানা যায়, ওই ঘটনার পর জাহাজের মালিক আটক নাবিক ও প্রকৌশলীদের মুক্ত করতে কোনো ধরনের সহযোগিতাই করেনি। জরিমানার বেশিরভাগ অর্থই দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাকি অর্থ দেয় সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে নৌ পরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় বেনারকে বলেন, “এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে অর্থ দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন উপায়ে কিছু অর্থ যোগান দিতে পেরেছি। আশা করি এসব নাবিক ও প্রকৌশলী শিগগিরই মুক্ত হয়ে দেশে ফিরবেন।”

জানা যায়, সরকারের এ সহায়তার পরিমাণ ২০ লাখ টাকারও বেশি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো প্রতিশ্রুত অর্থ দেওয়া হয়নি। এ অর্থ ধরেও এখনো প্রায় ১২ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে।

ওরা দোষী নন

চাকরিতে যোগ দেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় আটক হন এসব বাংলাদেশি। তবে ওই অপরাধের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে জানায় ওই জাহাজটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ সরকার।

তাদের বক্তব্য, ওই নাবিকদের জানার কথা নয়​ যে, জাহাজটি বৈধ না অবৈধ কিংবা তাতে কী ধরনের পণ্য রয়েছে।  সাধারণত: জাহাজ মালিকই এর কাগজপত্রের বৈধতা সম্পর্কে জানবেন।

আর জাহাজের পণ্য সম্পর্কে জানবেন জাহাজটি ক্যাপ্টেন। কিন্তু তাদের কাউকেই সাজা দেয়নি নাইজেরিয়ার আদালত।

এ বিষয়ে নৌ পরিবহন সচিব বলেন, “নাইজেরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় কেনিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা চালানো হয়।” বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশি ওই তরুণরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন। তাদের কোনো অপরাধ ছিল না।”

অপেক্ষায় পরিবার

এদিকে দীর্ঘ এক বছর ধরে আটকৃতদের অপেক্ষায় রয়েছেন দুঃসহ দিনাতিপাত করছে তাদের স্বজনরা। ভিনদেশে কবলে আটকে থাকা স্বজনদের উদ্ধারে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার শাহীনুল ইসলামের স্ত্রী ডা. ফারজানা ববি বেনারকে বলেন, “বিয়ের দু’বছরের মাথায় গত ২৪ মার্চ নতুন কর্মস্থল হিসেবে ওই জাহাজটিতে যোগ দেন শাহীন। এর কয়েকদিন পরেই আটক হন তিনি। জুন মাসে তাকে আদালতে সাক্ষী দিতে নেওয়া হয় বলে শুনেছি। এরপর অনেকদিন তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগে একবার স্বামীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পাই।”

ফেরত আসতে পারে জরিমানার টাকা

জরিমানা পরিশোধ করে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত আনার ব্যবস্থা হলেও পরবর্তীতে এ অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে জাহাজটির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবুল খায়ের বেনারকে জানান, “আমরা সবার আগে আটক নাবিক ও প্রকৌশলীদের মুক্ত করে আনতে চাই। আপাতত তারা টাকা দিয়ে মুক্তি পেলেও পরে আপিলে বিজয়ী হলে এ অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।