হলি আটির্জান থেকে উদ্ধার পাওয়া দুই সন্দেহভাজন নিখোঁজ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.07.14
160714-BD-standoff-1000.jpg ঢাকার গুলশানের হলি আটির্জান রেস্তোরাঁর বাহিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কাবস্থান,যেখানে গত ১ জুলাই জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে হত্যা করেছিল। জুলাই ২, ২০১৬।
এএফপি

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ থেকে উদ্ধার পাওয়া আবুল হাসনাত রেজাউল করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের খোঁজ মিলছে না। পুলিশ বলছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৮ জুলাই ওই দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে উভয়ের পরিবার বলছে, হাসনাত ও তাহমিদ বাড়ি ফেরেননি। পুলিশ হেফাজতেই তাঁরা আছেন বলে স্বজনদের বিশ্বাস।

আবুল হাসনাত রেজাউল করিম কোথায়, কীভাবে আছেন, তা অবিলম্বে পরিবারকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল । গত সোমবার অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ক্যাম্পেইনার অরা ফ্রিম্যান এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।

গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা করে জঙ্গিরা। ২ জুলাই ভোরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি মারা যায়। অভিযানের পর হাসনাত ও তাহমিদসহ মোট ১৩জনকে জীবিত উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় ৩২ জনকে উদ্ধারের কথা বলা হয়। সেখানেও রেজাউল ও তাহমিদের নাম উল্লেখ আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারও গত ৫ জুলাই সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু এর কদিন পরই জানানো হয় যে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “উদ্ধার পাওয়া সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে এখন আর কেউ নেই।" তবে কবে, কখন তাঁদের ছাড়া হয়েছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

আবুল হাসনাত রেজাউল করিম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।

“তিনি ২০১৩ সালের স্প্রিং সেমিস্টারে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই,” বেনারকে জানান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. জি ইউ আহসান।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তিনি সেখানকার নাগরিক। পরিবার বলছে, ঘটনার একদিন আগে দেশে ফেরেন তিনি। আর হামলার দিন ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন।

হলি আর্টিজান ক্যাফেতে কমান্ডো অভিযানের পর ওইদিন ফেসবুকে ডিকে ওয়াং নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে অভিযান নিয়ে কয়েকটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হয়। সেখানে একটি ভিডিওচিত্রে রেস্তোরাঁর প্রবেশমুখে বন্দুক হাতে এক জঙ্গির পাশে হাসনাত করিমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

আরেকটি ভিডিও চিত্রে হাসনাত করিম, তাঁর পরিবার ও আরও কয়েকজনকে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এ ছাড়া একটি দৈনিক পত্রিকায় ক্যাফের দ্বিতীয় তলায় দুই জঙ্গির সঙ্গে তাঁর একটি ছবি প্রকাশ পায়।

উদ্ধারকারীরা বলছেন, অভিযানের সময় তাহমিদের হাতে অস্ত্র পাওয়া গেছে। এই বিষয়টি সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

আবুল হাসনাত রেজাউল করিম। ফাইল ফটো, পারিবারিক সুত্র।

“হাসনাত বাসায় ফেরেনি। পুলিশ তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল বাসায় পৌঁছে দেবে। কিন্তু এখন তো দেখা করাও যাচ্ছে না। পুলিশ যেহেতু বাসায় পৌঁছে দেয়নি, তাই হাসনাত এখনো পুলিশ হেফাজতেই আছে বলে আমার বিশ্বাস,” বেনারকে জানান হাসনাতের বাবা এম রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, এই হামলায় হাসনাতের কোনোরকম সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও সন্দেহ থাকলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হোক। আদালতই প্রমাণ করবে, সে অন্যায় করেছে কিনা।

এদিকে তাহমিদের বাবা শাহরিয়ার খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বর্তমানে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে বেনারকে জানান।

তাহমিদ হাসিব খান। ফাইল ফটো, পারিবারিক সুত্র।

“আমার বিশ্বাস তাহমিদ এখনো পুলিশি হেফাজতে আছে। তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক,” বেনারকে বলেন শাহরিয়ার খান, যিনি দেশের বড় একটি শিল্পগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, এই দুজনের কাছ থেকে হামলা সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে এগুলো এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না।

অ্যামনেস্টির বিবৃতি

আবুল হাসনাত রেজাউল করিমের মুক্তির বিষয়ে অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ক্যাম্পেইনার অরা ফ্রিম্যান বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে দ্রুত আদালতে তোলা উচিত। তা না হলে অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

ফ্রিম্যান বলেছেন, পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, গোয়েন্দা পুলিশ হাসনাতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, যাদের উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে হাসনাতের অবস্থান সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে পরিবার ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎ এবং তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “একজন মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনের মধ্যে থেকেই সেটা করতে পারে। কিন্তু এ দুজনের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তা আইন ও সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

তিনি বলেন, সবাই জানে তাঁরা পুলিশ হেফাজতে ছিল। হঠাৎ করে পুলিশ বলা শুরু করলো তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁরা পরিবারের কাছে যায়নি।

“পুলিশ প্রকাশ্যে যেভাবে তাঁদের নিয়েছিলো, সেভাবে তাঁদের ছেড়ে দেবে—এটাই নিয়ম। পরিবারকে জানানো এবং পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে,” জানান নূর খান।

মর্গে পড়ে আছে লাশ

জিম্মি ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে পড়ে আছে। গত ১২ দিনেও লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বেনারকে বলেন, “লাশগুলো হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।