গুলশান হামলার তিন অর্থ জোগানদাতা চিহ্নিত,একজন সিরিয়ায়
2016.10.18

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় অর্থের জোগানদাতাদের চিহ্নিত করা গেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকয় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এই দাবি করেছেন।
সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “সিরিয়ায় যাওয়া ডাক্তার রুকনউদ্দিন এই হামলার জন্য ৮০ লাখ টাকা দান করে গেছে। তারপর মেজর জাহিদ তার অবসর সুবিধার যা কিছু পেয়েছে, তা এই সংগঠনে দান করে। এ ছাড়া নিহত তানভীর কাদেরী তার উত্তরার ফ্ল্যাট বিক্রীর টাকাসহ অন্যান্য সঞ্চয় দান করে গেছে।”
এর বাইরেও বিদেশে থাকা কোনো কোনো সদস্যের মাধ্যমে টাকা এসেছে বলে জানান মনিরুল। তিনি বলেন, “হয়তো আরও অর্থদাতা থাকতে পারে। তাদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল বলেছিলেন, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার জন্য অর্থ এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডির মাধ্যমে এবং ব্যবহৃত অস্ত্র এসেছে ভারত হয়ে।
গুলশান হামলার অর্থায়ন প্রসঙ্গে তখন মনিরুল বলেন, হামলায় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেটা সংগ্রহ থেকে শুরু করে পুরো ঘটনার বিষয়ে তাঁরা কিছুটা জানতে পেরেছেন। অর্থ ও অস্ত্র দুটোই বাইরে থেকে এসেছে।
টাকার পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ বলে জানানো হয়। এ টাকা জঙ্গিরা অস্ত্র সংগ্রহ ও বাসা ভাড়ার কাজে লাগিয়েছে। এই অর্থটা যিনি গ্রহণ করেছেন, তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে এবং তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানান মনিরুল।
তিন অর্থদাতার পরিচয়
গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় জঙ্গি জাহিদ। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, জাহিদ ছিল নারায়ণগঞ্জ অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর প্রধান সহযোগী। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তাই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা বলছেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর জঙ্গি দলটির সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল তানভীর কাদেরী। ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন তিনি। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন। ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে পুলিশের অভিযানের পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন (৫০) খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় থাকতেন। তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫) যশোর সরকারি এম এম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাদের সঙ্গে তাদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন(২৩) ও রামিতা রোকন(১৫) এবং জামাতা সাদকায়েস (৩০) গত এক বছর ধরে নিখোঁজ।
গতকাল সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মনিরুল ইসলাম বলেন, “ডা. রোকন যাওয়ার আগে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা রেখে গিয়েছিল। বলে গিয়েছিল এই এই নামে লোক আসলে টাকা দিয়ো। এই টাকার কিছু অংশ মিসিং হয়ে গেছে।”
পুলিশের দাবি, রোকন আইএসএর শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছে। সম্ভবত সিরিয়ার রাকার দিকে সে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকতে পারে।
তামিমকে সনাক্ত করেছে কানাডা
তামিম চৌধুরী বিষয়ে কানাডার পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ছবি দেখে তারা তামিমকে শনাক্ত করেছে এবং আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। লিগ্যাল আইডেনটিফিকেশনের জন্য তারা ডিএনএ নিয়ে গেছে। সেখানে তার পরিবারের সঙ্গে হয়তো মিলিয়ে দেখবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, ‘তামিম বাংলাদেশে এসেছে, এটা বিদেশি সংস্থাই প্রথম জানায়। এরপর তাকে ধরতে অনেক অভিযান চালানো হয়। একবার মিরপুর থেকে এনএসআই ও আমাদের যৌথ অভিযানে ওই চেহারার একজনকে ধরে নিয়ে আসা হয়। পরে যাচাই–বাছাই শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
ডাকাতির টাকা জঙ্গি নেতাদের জন্য
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার জেএমবির সন্দেহভাজন সাত জঙ্গি সংগঠনের জন্য অস্ত্র কেনা এবং কারাবন্দী নেতাদের মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতি করত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এই দাবি করেছেন।
সোমবার রাতে তেজগাঁও এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন হল; মো.জুয়েল সরকার ওরফে সোহরাব ওরফে সরকার (৩২), মো.রাশেদ ওরফে কাকলীর বাবা (২৭), মো.সেন্টু হাওলাদার ওরফে জাহিদ (২৬), নাজমুল হাসান ওরফে নয়ন ওরফে নরেশ (২৩), মো. আবদুল বাসেদ(২২), মো.কাসেম ওরফে কাওসার ওরফে কাসু(২০) এবং মো. আবুবকর সিদ্দিক ওরফে শুভ্র ওরফে আকাশ (২০)।
জেএমবির সন্দেহভাজন নারী সদস্য রিমান্ডে
সিরাজগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সন্দেহভাজন নারী সদস্য আছিয়া খাতুন ওরফে আকলিমার(২৫) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরিফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, ‘গত শনিবার মধ্যরাতে জেলার সদর উপজেলার কড্ডার মোড় এলাকা থেকে জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সন্দেহভাজন নারী সদস্য আছিয়া খাতুন ওরফে আকলিমাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।’
গত রোববার তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আজ শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওহেদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বেনারকে বলেন, “আছিয়া সম্প্রতি পুলিশের যৌথ অভিযানে গাজীপুরের পাতারটেকে নিহত জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম আকাশের ঘনিষ্ঠ সহচর। গত সেপ্টেম্বর মাসে ফরিদুলের মা ও দুই বোনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যমতে, আছিয়াকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
আল্লাহর দলের প্রধানসহ ১৬ জনের কারাদণ্ড
এদিকে টাঙ্গাইলে জঙ্গি সংগঠন আল্লাহ্র দলের প্রধান মতিন মেহেদীসহ ১৬ জনকে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ আদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গি সংগঠন আল্লাহ্র দলের কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। ২০০৭ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানার পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তাদের গ্রেপ্তার এবং বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিল।