গুলশান হামলার আরেক হোতা মারজানের ছবি প্রকাশ,গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে
2016.08.12

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ‘সাংগঠনিক নাম’ প্রকাশ করে পুলিশ বলেছে, তার মাধ্যমে রেস্তোরাঁর ভেতরে থাকা জঙ্গিরা ওই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ছবিগুলো বাইরে পাঠিয়েছিল।
এর আগে পুলিশ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই মাস্টারমাইন্ডের নাম প্রকাশ করে,যাদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী এবং অপরজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়া।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম তৃতীয় আরেক পরিকল্পনাকারী মারজানের নাম প্রকাশ করেন। পুলিশ ওই হোতার ছবি প্রকাশ করলেও তার নাম–ঠিকানা জানাতে পারেনি। পুলিশ বলছে, ‘মারজান’ তার সংগঠনিক নাম।
শুক্রবার মারজানের তথ্য চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘গ্রেপ্তারে সহায়তা করুন’ শিরোণামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মারজান। ফাইল ফটোঃ ডিএমপি
এতে বলা হয়, “গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা করা সন্ত্রাসীরা এই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার সাংগঠনিক নাম “মারজান”। সে ওই ঘটনার সন্দেহভাজন। তার পরিচয় সম্পর্কে জানা থাকলে “Hello CT” অ্যাপ এর মাধ্যমে পুলিশকে অবহিত করুন।”
“আমরা তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করলেও বিস্তারিত কিছু পাওয়া যায়নি। তার একটি ছবির সূত্র ধরে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে,” বেনারকে জানান মনিরুল।
তিনি জানান, ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি এবং সম্ভবত ঢাকা শহরের কোথাও থাকতে পারে। এর আগে পুলিশ জানায়, অপর দুই হোতা জিয়া ও তামিমও ঢাকায় রয়েছে। তবে বেনারের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, ‘তারা পুলিশ হেফাজতে নেই। তবে পুলিশ তাদের ধরার চেষ্টা করছে’।
“গুলশানের ঘটনায় দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পাঁচজন এসেছিল, তারা এসেছিল বসুন্ধরার বাসা থেকে এবং তাদের মূল মাস্টারমাইন্ড (তামিম) সঙ্গে ছিল শুধুমাত্র অনুপ্রাণিত করার জন্য,” জানান মনিরুল।
তামিমকে গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলে মনে করছে পুলিশ। ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নয় সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হওয়ার পর যে মামলা হয়েছে, তাতেও তামিম অন্যতম আসামি।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান বলেন, “বাইরে থেকে পাঁচজন জঙ্গি গুলশানের রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেছিল। হোটেলের ভেতরে সাইফুল কাজ করতো। এই গ্রুপের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল কি না—সেটি তদন্ত শেষ না হলে বলা যাচ্ছে না।”
রিমান্ড শেষ দুই সন্দেহভাজনের
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম ও কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানের শরীরের ভাষার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। আট দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার তাদের আদালতে হাজির করা হবে।
১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সময় হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিবের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
“কী পরিস্থিতিতে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের হাতে অস্ত্র উঠল, কী পরিস্থিতিতে তাদের শরীরী এমন হয়েছিল, তা রিমান্ডে জানতে চাওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা।
তিনি জানান, হাসনাত করিমের মুঠোফোনে ‘অ্যাপ উইকার’ ডাউনলোড করা হয়েছিল। এ বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই অ্যাপ ব্যবহার করেই জঙ্গিরা হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে বাইরে যোগাযোগ করে থাকতে পারে। তাই মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
“শনিবার আবারও তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে,”বেনারকে জানান কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটি) প্রধান মো.মনিরুল ইসলাম।
গত ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোরা অভিযান চালিয়ে হলি আর্টিজান বেকারি থেকে নারী, শিশুসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া লোকজনের মধ্যে ধানমন্ডির বাসিন্দা কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান (২২), প্রকৌশলী হাসনাত করিম (৪৮) ও তার স্ত্রী শারমিনা করিম (৩৬), তাদের দুই শিশুসন্তানও রয়েছে।
তাদের মধ্যে থেকে আটজনকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসান ছাড়া অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত ৮ জুলাই পুলিশ হাসনাত ও তাহমিদকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু তারা বাসায় ফিরে যায়নি। ৩ আগস্ট পুলিশ গুলশানে হামলার ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তারের খবর জানায়। পরে দুজনকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়, যা আজ শেষ হচ্ছে।