গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গিদের অভিভাবকদের সঙ্গে ডিএনএ মিলেছে
2016.08.23

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কমান্ডো অভিযানে নিহত ছয় জঙ্গির ডিএনএ তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলেছে। ছয়টি মরদেহ এখনো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রয়েছে।
“সোমবার ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। এখন লাশ নিতে চাইলে স্বজনদের আবেদন করতে হবে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বলেন, “মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন মামলার প্রয়োজনে লাশগুলোর আর প্রয়োজন নেই, তাহলে তিনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।”
জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি হল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাস্টিকার মীর সামেহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
নিহতদের মধ্যে আরও রয়েছে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের মরদেহ।সাইফুল জঙ্গিদের সহায়তা করেছিল বলে অভিযোগ পুলিশের।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ থেকে গত ২০ জুলাই ঢাকার তিন ‘জঙ্গি’ ও সাইফুল চৌকিদারের অভিভাবকদের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিভাবকত্ব নিরূপণের জন্য সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে তাঁদের নমুনা রাখা হয়েছিল।বগুড়ার শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েলের স্বজনদের কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনা পুলিশ ঢাকায় সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছিল।
গত ১ জুলাই রাতে জঙ্গিরা গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় অতর্কিতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
পরদিন সকালে সেনা নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে হামলাকারি পাঁচ জঙ্গি ও বাবুর্চি সাইফুলসহ ছয়জন নিহত হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, গুলশানে নিহত জঙ্গিরা ক্যাপ্টাগন বা অন্য কোনো মাদক গ্রহণ করেছিলেন কি না তা পরীক্ষা করতে নমুনা এফবিআইতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এফবিআই ওই নমুনার ফল পাঠায়নি।
নিহতদের স্বজনেরা মরদেহ চান
নিবরাজ ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমার ছেলে যা করেছে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা তাকে ক্ষমা করবেন। আমি একজন হতভাগ্য পিতা। সন্তানের লাশটা আমি শুধু দাফন করতে চাই।”
মীর সামেহ মোবাশ্বেরের বাবা মীর এ হায়াৎ কবীরও ছেলেকে একবার দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। সাড়ে ১৮ বছরের মোবাশ্বের কোচিং এ যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়ে এ বছরের মার্চে। তারপর থেকে সে আর ফিরে যায়নি।
হায়াৎ কবীর বেনারকে বলেন, “পত্রিকার ছবির সঙ্গে ছেলের ছবি মিলে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ যে নাম বলেছিল প্রথমে তার সঙ্গে মেলেনি। তখন মনে ক্ষীণ আশা ছিল আমার ছেলে হয় তো জঙ্গি হামলা করেনি। এখন বুঝতে পারছি ছেলে বিপথে চলে গিয়েছিল।”
মীর হায়াৎ কবীরও ছেলের হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কল্যাণপুরের জঙ্গিদের লাশ ঢাকা মেডিকেলে
এদিকে গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে নিহত নয় জঙ্গির সাতজনের অভিভাবকের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো একজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে তারেক ওরফে আবু রায়হানের স্বজনেরা ডিএনএ নমুনা দেননি। সবশেষ গত শনিবার আকিফুজ্জামানের অভিভাবকেরা এসে ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন।
পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে যাদের লাশ শনাক্ত করা গেছে তারা হল, দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইলের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান খান, সেহজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিয়ার রহমান, নোয়াখালীর মো. জোবায়ের হোসেন এবং রংপুরের মো. রায়হান কবির ওরফে ফারুক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বেনারকে বলেন, “কল্যাণপুরের ঘটনায় একজনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। এর মধ্যে তিন-চারটি পরিবার এসে লাশ দেখে গেছে। নিখোঁজ থাকা স্বজনের সঙ্গে চেহারায় মিল না থাকায় তাঁরা ফিরে গেছেন।” তিনি আরও বলেন, তাঁরা নয়জনের শরীর থেকেই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং আদালতের নির্দেশে সেগুলো পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা আরও জানান, তাঁরা নিহত জঙ্গিদের চুল, নখ ও মাংসপেশির নমুনা রেখেছেন। তাদের ভিসেরা নমুনা পরীক্ষার জন্য মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।