‘নিখোঁজ’ হাসনাত ও তাহমিদ গ্রেপ্তার,৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
2016.08.04

‘নিখোঁজ’ থাকা দুই ব্যক্তি—হাসনাত রেজা করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে অবশেষে পাওয়া গেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটদিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ৩২ দিন পর তাদের পাওয়া গেল।এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের পরিবার স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত রেজা করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। আর দেশের একটি বড় শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পুত্র তাহমিদ হাসিব খান কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার সূত্রে বেনারকে বলেন, “হাসনাত করিম কনস্যুলার সুবিধা চাইলে তা বিবেচনা করে দেখা হবে। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে আর কিছু বলার নেই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বেনারকে জানিয়েছে, ব্রিটিশ হাইকমিশন তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিমের পরিবারের পক্ষে যুক্তরাজ্যে তার আইনজীবী রডনি ডিক্সন গত ২৯ জুলাই জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রেরি ডিটেনশন’ এ চিঠি দেন। গত ১২ জুলাই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে হাসনাত কোথায়, কীভাবে আছে তা বাংলাদেশ সরকারকে জানানোর অনুরোধ করে।
এদিকে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, তাহমিদ হাসিব খানের পরিবার তার বিষয়ে খোঁজ নিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে চিঠি দেয়।
গতকাল হাসনাত ও তাহমিদকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তারা দুজনই গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার সময় হলি আর্টিজান বেকারিতে উপস্থিত ছিলেন।তবে গত ৩২ দিন তারা কোথায় ছিলেন, তার সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, হাসনাত করিমকে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আর বসুন্ধরা জি ব্লক থেকে একইদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহমিদকে।
“হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় এ দুজনের সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রয়োজনে অন্যান্যদেরও ডাকা হতে পারে,” বেনারকে জানান মাসুদুর রহমান।
এই দুজনকে গতকাল আদালতে তোলা হয়। পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্দেশীয় অপরাধ দমন বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির আসামি দুজনের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ঘটনার দিন আসামিরা উপস্থিত থেকে জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছেন বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া আসামিদের মোবাইল থেকে জঙ্গিরা যোগাযোগ করেছিল। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অবশ্য শুনানিতে রিমান্ড আবেদন বাতিল করে আদালতকে জামিন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন দুজনের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ দিকে পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে হাসনাত করিম ও তাহমিদের পরিবার।
“এখন বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এসেছে। এখন হয়তো পুলিশ তাকে রিমান্ডে নেবে, কারাগারে পাঠাবে। আমরা জামিনের জন্য আবেদন করব,” বেনারকে জানান হাসনাত করিমের বাবা রেজাউল করিম।
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৮ জুলাইয়ের পর হাসনাত ও তাহমিদ তাদের হেফাজতে ছিলেন না। তাদের অবস্থান নিয়ে চলা ধোঁয়াশার মধ্যেই পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত মঙ্গলবার বলেন, হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান তাঁদের ‘নলেজে’ আছেন।তবে তারা পুলিশ হেফাজতে ছিল কিনা, সেই প্রশ্নের জবাব দেননি পুলিশ প্রধান।
গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর একজন কোরীয় নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হাসনাতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। ওই ভিডিওতে তাকে জঙ্গিদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে দেখা যায়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠলে ২০১২ সালে হাসনাত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছাড়েন।
জঙ্গি সন্দেহে আটক ১২জন
এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডির শুক্রাবাদ এলাকার একটি মেসে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১২ জনকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করেছে পুলিশ।
শেরে বাংলা থানার পুলিশ জানায়, জঙ্গিবিরোধী নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে শেরে বাংলা থানার পুলিশের একটি দল শুক্রাবাদে চারতলা একটি বাড়িতে অভিযান চালায়।
ভবনটিতে ‘জামিয়াতুস সালিহীন মাদ্রাসা’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার চারটি কক্ষ মেস করে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার ছাত্ররা ভাড়া থাকেন। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলা অভিযানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীসহ ১২ জনকে আটক করা হয়।
তাদের মধ্যে পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের ছাত্র, দুজন মাদ্রাসাটির শিক্ষক ও একজন চিকিৎসক আছেন বলে জানা যায়। আটক ১২ জনকে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ওই মেস থেকে কয়েকটি কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করেছে।
শাহিরুন হুদা নামে আটক এক তরুণ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি ড্যাফোডিলের তড়িৎ কৌশল বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনিসহ মোট ১২ শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাদের সবাইকেই আটক করা হয়েছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বেনারকে বলেন, “ড্যাফোডিলের ছাত্রদের ল্যাপটপে জঙ্গি বিষয়ক কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”