এবার ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত হত্যা, আইএসের দায় স্বীকার
2016.06.07
দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহ সদরের মহিষারভাগাড় এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী এক বয়োবৃদ্ধ পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাঁকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ এজেন্সি এই খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে এলাকার একটি মাঠ দিয়ে বাইসাইকেলে করে যাওয়ার সময় আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি (৭০) নামে ওই পুরোহিতকে হত্যা করা হয়। মাঠে কাজ করতে যাওয়ার সময় কৃষকেরা তাঁর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।
এ নিয়ে চলতি বছর ঝিনাইদহ জেলায় একইরকম তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটল। কোনও ঘটনারই রহস্য উদঘাটন হয়নি। সবগুলোর দায় স্বীকার করেছে আইএস। যদিও সরকার বলছে, দেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই।
“গোপন সূত্রে আমরা জেনেছি, ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজনকে চলে যেতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ ঘটনার মিল থাকতে পারে,” টেলিফোনে বেনারকে জানান ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান।
এ বছরের জানুয়ারিতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামে হোমিও চিকিৎসক ছামির আলীকে (৮০) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস জানায়, ইসলাম থেকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়া গত ১৪ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী আবদুর রাজ্জাক (৪৮) নামের এক হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যারও দায়ও স্বীকার করে আইএস।
গত রোববার চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। ওই দিনই নাটোরে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে নিজ দোকানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সুনীলকে হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এভাবে গত দেড় বছরে ৪৯ জন খুন হলেন। অন্তুত ৩০ টি ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
একের পর এক এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকারি দলের নেতারা এ বিষয়ে বক্তৃতা–বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমের পিড়াপিড়িতে কিছু কথা বললেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমালোচনা সৃষ্টি করছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ছিলেন। সৌদি আরব থেকে গতকাল রাতে তিনি দেশে ফিরেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গতকাল নিহত পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে পূজা করতেন। গ্রামের কারও সঙ্গে পুরোহিত বা তাঁর পরিবারের কোনো বিরোধ ছিল না।
প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক নীলরতন রায় বেনারকে বলেন, “পুরোহিত কাকা পূজা করে বেড়ান। তাঁর শত্রু নেই। কারা, কেন মারল, বুঝতে পারছি না।”
“বাড়িতে পূজা ও খাওয়া-দাওয়া সেরে সকালে বের হন তিনি। কারা তাঁকে খুন করল, কিছুই বুঝতে পারছি না,” স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান নিহতের স্ত্রী শেফালী গাঙ্গুলি।
নিহত পুরোহিতের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলের একজন স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক ও আরেকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
বিএনপির প্রতিবাদ
আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে গলা কেটে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জঙ্গিরা দেশের মধ্যেই একের পর এক খুনের অভয়ারণ্য তৈরি করে যাচ্ছে। তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস না হয়ে বরং আরও বেশি পুষ্টি লাভ করছে। তিনি বলেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় জঙ্গিবাদী উগ্রপন্থী ব্যক্তিরা মনে হয় দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, জঙ্গিবাদের ফলে সৃষ্ট বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আদৌ কোনো ইচ্ছা সরকারের আছে কি না, তা নিয়ে জনমনে এক বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, জঙ্গিবাদ দমনে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে পারেনি। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণেই সবার মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতির সীমানা ক্রমাগতভাবে বিস্তার লাভ করছে।