ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কথিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.16
160516-BD-Hindus-620.jpg ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কথিত অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ বস করানো হয়। মে ১৩, ২০১৬।
এএফপি

ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটে। এর আগে ওই শিক্ষককে মারধর করেন এলাকাবাসী।তবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সম্প্রতি বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলায় ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দুই শিক্ষককে ছয় মাস করে জেল দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত শনিবারের ঘটনা তদন্তে রোববার বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকম নুরুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ক্লাসে দুষ্টুমি করায় গত ৮ মে স্কুলের দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র রিফাত হোসেনকে মারধর করেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। বিষয়টি স্কুলের পরিচালনা পরিষদকে জানায় ওই ছাত্র।

গত শুক্রবার (১৩ মে) সকালে উন্নয়ন নিয়ে স্কুল কমিটির আহ্বান করা সভায় রিফাতের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময়ে হঠাৎ করে এলাকায় একটি মহল প্রচার করে যে, প্রধান শিক্ষক ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকেও বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়।এরপর আশপাশের লোকজন এসে স্কুল ঘিরে ফেলে ও শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করেন।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে বিকেল ৪টায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। তখন তার নির্দেশে ওই শিক্ষকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়।

এই ঘটনাটি মুঠোফোনে ভিডিও করেন অনেকে। এরপর ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, সাংসদ সেলিম ওসমান শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করার জন্য বারবার হাত দিয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন আর শিক্ষক তা করছেন। সামনে একদল মানুষ তার ওঠবসের সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একপর্যায়ে ওই শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান। কিন্তু এরপরও শেষ হয়নি শাস্তির পালা। কয়েকজন মিলে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে দাঁড় করিয়ে দেন। এরপর সেলিম ওসমান দুই হাত জোড় করে ওই শিক্ষককে দেখান কীভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।সাংসদের নির্দেশমতো সমবেত জনতার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান শ্যামল কান্তি। এ সময় জনতাকে হর্ষধ্বনি দিতে শোনা যায়।

ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। তিনি বলেছেন, রিফাত নামের এক ছাত্রকে ক্লাসরুমে অতিরিক্ত দুষ্টুমির কারণে শাসন করেছিলেন তিনি। কিন্তু ধর্মীয় ইস্যুতে কিছু বলেননি।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার সভার মধ্যে হঠাৎ করে অভিযোগ করা হয় তিনি ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তখন আর তার কিছু করার ছিল না। অতর্কিত লোকজন এসে তাঁকে মারধর শুরু করে।

প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মতিউর রহমান মিজুর নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিয়ন মিজানুর রহমান ও মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে হামলা ও লাঞ্ছিত করার এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, তাঁকে সরিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বোন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারকে প্রধান শিক্ষক পদে বসানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

“ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক অনুতপ্ত হয়ে ওই ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি ছাত্রটির মায়ের কাছেও ক্ষমা চান,” বেনারকে জানান পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলামিক শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি সৈয়দ বোরহানুল ইসলাম।তিনি বলেন, মারধরের ঘটনার আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী তার কাছে অভিযোগ করেনি। এমনকি ওই ছাত্র রিফাতদের বাড়িতে গেলে, তারাও ধর্মীয় অনুভূতিতে কটূক্তির বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি।

এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকের বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি মর্মাহত ও অত্যন্ত দুঃখিত। কেউ দোষ করলে নিয়মনীতি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কিন্তু একজন শিক্ষকের সঙ্গে এ ধরনের অসম্মানজনক আচরণ কাম্য নয়।

সাংসদ সেলিম ওসমানও বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ওই শিক্ষককে বাঁচাতেই তিনি তাৎক্ষণিক ওই শাস্তির নির্দেশ দেন ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।