কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার নতুন করে গ্রেফতারে প্রতিবাদের ঝড়
2015.04.17

কাশ্মিরে শুক্রবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মাসারাত আলম ভাটকে নতুন করে গ্রেফতার করায় রাজপথে সহিংস প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গতমাসে জেল থেকে মুক্তি পাবার পর তাকে নিয়ে ভারতে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ওঠে।
শ্রীনগরে সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত ২০ পুলিশ অফিসার ও ৫ প্রতিবাদকারী আহত হয়েছেন।খবর এপি’র।
ভাট আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার হন শুক্রবার, এর আগে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিলো। তাকে ছাড়াও আরো ২ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেফতার করা হয়।প্রতিবাদকারীরা এতেও ক্ষুব্ধ হয়।
শাবির শাহ ও সৈয়দ আলি জিলানি হুরায়েত কনফারেন্স পার্টির ২ প্রবীন সদস্যকেও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
এপি ও এএফপি জানায়,পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস প্রতিবাদকারীদের দিকে ছুড়ে মারলে প্রতিবাদকারীরা পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে ও ভারতীয় পতাকা পুড়ে ফেলে।
৯০ দশকের পর থেকে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মির উপত্যকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিদ্রোহাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এরজন্য ভারত পাকিস্তানকে ৬৮ বছর ধরে দায়ী করে আসছে।উভয় দেশই ভারত নিয়ন্ত্রিত এই ভূখন্ডের দাবীদার।
ভাটকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই সপ্তাহে ভারত বিরোধী এক সভা ডাকার জন্য।বুধবারের প্রতিবাদ সভাটি ছিলো সোমবার শ্রীনগরের অদূরে ট্রাল শহরে এক জঙ্গির ভাইকে ভারতীয় সেনারা হত্যা করার ফলে বিক্ষোভ প্রসূত।নয়াদিল্লিতে জিলানীর বাড়ি থেকেও এই সমাবেশের সমর্থন দেয়া হয়। তিনি সেখানে তিন মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এই তিন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেফতার করা হয় তাদের ট্রালে শুক্রবারের প্রতিবাদ সভায় যোগদান থেকে বিরত রাখার জন্য।
একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ
গত ৭ মার্চ রাজ্যে নব নির্বাচিত সরকার ভাটকে আটকাবস্থা থেকে মুক্তি দেয়।৭ বছর তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই তাকে আটকে রাখা হয়।এর আগেও তিনি বহুদফা গ্রেফতার হয়েছিলেন।২০১০ সালে পাথর নিক্ষেপ কর্মসূচির জন্যেও একবার তাকে আটক করা হয়। রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তখন ১১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
জম্মু ও কাশ্মির সরকার ভাটকে ছেড়ে দেয়ায় রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। রাজ্যের নতুন ক্ষমতাসীন কোয়ালিশনের ২ দল বিজেপি ও পিডিপির মধ্যে মতানৈক্য উভয় দলকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলে।
দুইদলের মধ্যে চুক্তি ছিলো তারা ন্যূনতম ঐক্যমত্যের কর্মসূচি নিয়ে সরকার চালাবে এবং একে অপরের সাথে আলোচনা করে চলবে। যেমন পাকিস্তানের সাথে শান্তি আলোচনা ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি। ভাটের কাশ্মির জেল থেকে মুক্তির প্রসঙ্গও ছিলো।
ভাটের মুক্তির সিদ্ধান্তের পর মূখ্য মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সায়েদ (পিডিপি) ভারতীয় রাজনীতিকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।তারা বলেন, ভাটকে মুক্তির মাধ্যমে ভারতের নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে উস্কে দিচ্ছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাটের মুক্তি আইনসঙ্গত।
বিজেপির কর্মকর্তারা বলছেন, মূখ্যমন্ত্রী তাদের সাথে আলোচনা না করে যৌথ-সম্মত চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।
কাশ্মির বার এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি এডভোকেট গোলাম নবী শাহীন বেনার নিউজকে বলেন, “এই বিচ্ছিন্নতাবাদীকে রাজ্য সরকারের মুক্তি দেয়া আইনসঙ্গত এবং সংবিধান সম্মত ছিলো।সব আদালতেই তিনি জামিন প্রাপ্ত ছিলেন। জন নিরাপত্তা আইনে তিনি ৬ বার আটক হন।কিন্তু সব আটকই জম্মু ও কাশ্মিরের হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণা করে।ভারতের সুপ্রীম কোর্টও বলেছে আইনের চোখে তার আটক বৈধ নয়”।
শাহীন বলেন, আদালত যদি বলে ভাটের আটক বেআইনী ও অসংবিধানিক তাহলে তাকে মুক্তি দেয়া ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় থাকে না।
পিডিপি জানায় তাদের সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত
রুরাল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার আব্দুল হক খান বেনার নিউজকে বলেন, “ সরকার শুধু সহায়তা করেছে তার আইন সঙ্গত ও সংবিধান সম্মত মুক্তির ব্যপারে। আমাদের সরকার এই উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও তা অর্জনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ছাড়া একজন রাজবন্দীর মুক্তি অনিবার্য।একজন রাজনৈতিক বন্দির মুক্তিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো উচিত না, সরকার যেখানে রাজ্যে জঙ্গিদের মোকাবেলায় লিপ্ত রয়েছে।আমাদের সরকার জা্তীয় নিরাপত্তার সাথে কোনো অবস্থাতে কোনোভাবেই আপোস করবে না”।