মুম্বাই সিরিজ বোমা হামলায় ১২ পাকিস্তানি দোষী সাব্যস্ত
2015.09.11

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মামলায় ১২ জন পাকিস্তানিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার বিশেষ আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সোমবার আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার কথা রয়েছে। অভিযুক্তদের কারো কারো মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে আইনজ্ঞরা বলেছেন।
২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ের ব্যস্ত সময়ে পশ্চিম রেলওয়ের চলন্ত ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে মাত্র ১১ মিনিটে সাতটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ১৮৯ জন নিহত ও ৮১৭ জন আহত হন। সাতটি প্রেসারকুকারে করে পৃথকভাবে বোমাগুলো নিয়ে গিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।
এই আক্রমন ছিলো ১৯৯৩ সালে সংঘটিত সিরিয়াল বোমা হামলার ঘটনার পর দ্বিতীয় ঘটনা। সে হামলাতেও ২৫৭ জন নিহত হন এবং ৭ শতাধিক মানুষ আহত হন।
মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অরগানাইজড ক্রাইম এক্ট(এমসিওসিএ) এর ওয়াইডি সিন্ধের আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা, ষড়যন্ত্র ও একটি জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত বলে দোষী সাব্যস্ত করে।খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
আদালত মুম্বাইএর অধিবাসী ও সন্দেহভাজন আব্দুল ওয়াহিদ দিন মোহাম্মদ শেখকে তার নিজের বাড়িতে পাকিস্তানি হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনে।
দীর্ঘ আটবছর মামলা শুনানিতে এবং ২০০ স্বাক্ষির জেরার পর ২০১৪ সালের ১৪ অগাস্ট এর শুনানি শেষ হয়।
দোষীদের মৃত্যুদন্ড হতে পারে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দোষীদের মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হতে পারে।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সুশান্ত কুমার ঠাকুর বেনারকে বলেন, “ অভিযুক্তরা হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তারা সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার অপরাধ করেছেন। আইনের চোখে তারা মৃত্যদন্ড পাবার যোগ্য”।
তিনি আরো যোগ করে বলেন, “ যাবজ্জীবনও এ ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হতে পারে”।
এই মামলার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটার রাজা থাকারে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন জানিয়েছেন।
“ এই মামলায় সন্ত্রাসীদের হাতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। আমি চাই এই রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে”, এক্সপ্রেসকে জানান থাকারে।
মুম্বাই পুলিশের এন্টি টেরোরিজম স্কোয়াড (এটিএস) ২০০৬ সালের নভেম্বরে এই ঘটনায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। গ্রেফতারকৃত ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনই পাকিস্তানি। তারা পাকিস্তান-কেন্দ্রিক লস্কর-ই তৈয়বা (এলইটি)এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার সাথে যোগসাজশ ছিলো বলে ভারত বরাবরই অভিযোগ করে এসেছে।
অভিযুক্ত বাকি ১৭ জনের ব্যাপারে কি হবে আদালত শুক্রবার কিছু জানায় নি।
ফাঁসির দাবি
মুম্বাইর অধিবাসীরা যারা এই হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহতদের স্বজন তারা সবাই দোষীদের অবিলম্বে ফাঁসির দাবী তুলেছেন।
মহারাষ্টের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভূষন কুমার বেনারকে বলেন, “সন্ত্রাসী যারা ঠান্ডা মাথায় প্রায় ২০০ নারী-পুরুষ ও শিশুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তাদেরকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে”।
মুম্বাই-এর বন্দ্রা শহরের অধিবাসী মোহাম্মদ হানিফ বেনারকে বলেন, “এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ডের জন্য মৃত্যুদন্ডই তাদের প্রাপ্য”।
তিনি আরো বলেন, ইসলামে সহিংসতার কোনো স্থান নেই।