ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ‘বিশেষ ভিসা’
2016.06.28

‘আমেরিকার ভিসার চেয়ে ইন্ডিয়ার ভিসা পাওয়া কঠিন’—বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিবেশি দেশ ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে এমন উপলব্ধি দীর্ঘদিনের।
দালালদের দৌরাত্ম আর নানা ঝামেলায় ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে অনুযোগের কমতি নেই। এই পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
অন-অ্যারইভাল ভিসা প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়া সহজ করতে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।
শুধু তাই নয়, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ ভিসা ক্যাম্পের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য অর্ধ লাখের বেশি ভিসা ইস্যু করেছে ভারত, যা দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
১২ দিনে ৫৭ হাজার ভিসা
গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের যে বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে, তা হলো ভিসা ইস্যু। দালালদের দৌরাত্মে স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশিদের ভারতের ভিসা পাওয়াই যেন দায় হয়ে উঠেছিল।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার পর নড়েচড়ে বসে ভারত। এরপর ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় বিশেষ ভিসা ক্যাম্পের আয়োজন করে ভারতীয় হাইকমিশন। সেখানে ভারত ভ্রমণের জন্য এক বছর মেয়াদী মাল্টিপল ভিসা দেয়া হয়।
এ সুযোগ লুফে নেন ভারতে গমনেচ্ছুক বাংলাদেশিরা। প্রতিদিন হাজার হাজার ভিসা আবেদন জমা পড়তে থাকে। মাত্র ১২ দিনের ক্যাম্প শেষে আবেদন যাচাই করে বিপুলসংখ্যক ভিসা ইস্যু করে ভারতীয় হাই কমিশন।
এ বিষয়ে ভারতীয় হাই কমিশনের প্রেস অ্যাটাশে রঞ্জন মন্ডল বেনারকে বলেন, “ভিসা ক্যাম্পে জমা পড়া আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫৭ হাজার ৩১৮টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। আবেদনকারীদের বেশির ভাগই ভিসা পেয়ে গেছেন। আরও কিছু আবেদনকারি বাকি আছেন।”
আরো সহজ হচ্ছে প্রক্রিয়া
এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা পাওয়ার সার্বিক প্রক্রিয়া আরও সহজ করার কথা ভাবা হচ্ছে। দু’পক্ষের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, “বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা আরও সহজ করা হবে।”
গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে এক আলোচনা সভায় ভারতের হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশ ভারতের খুব কাছের বন্ধুপ্রতিম দেশ। দিনে দিনে দুই দেশের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে।”
অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধাসহ অন্যান্য ভিসা ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া সহজ করার ইঙ্গিত দিয়ে রঞ্জন মণ্ডল বেনারকে বলেন, ভিসা সহজ করার অনেকগুলো প্রস্তাব আছে। তবে সেগুলো এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। আরো কিছু সময় লাগবে।
তিনি জানান, গত বছর বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ ভিসা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। যাদের মধ্যে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ১২ লাখের মত বাংলাদেশি।
এবার সে সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন রঞ্জন মন্ডল।
দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান ভিসা জটিলতা কমে আসার প্রতিশ্রুতিতে নানা মহলে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মেডিকেল ও ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রচুর বাংলাদেশি ভারতে যাতায়াত করেন।
যশোরের বাসিন্দা রোকেয়া হাবিব বেনারকে বলেন, “নিজের বাবার বাড়ি ভারতে হলেও ইচ্ছেমতো যাতায়াত করতে পারিনা ভিসার অভাবে। এমনকি কিছুদিন আগে আমার আপন বড় ভাই মারা গেলেও আমি লাশ দেখতে পারিনি।”
তিনি জানান, আবেদন করার প্রায় দুই মাস পর তিনি ভিসা পান। ভারত সরকার ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করলে দুদেশের মধ্যকার বন্ধন আরো শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে ব্যাপকহারে ভারতের ভিসা দেওয়া নিয়ে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাদের মতে, ঈদকে কেন্দ্র করে অর্ধলক্ষ ভিসা দেওয়ায় দেশীয় ব্যবসায়ীদের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, অনেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে ভারতে যাচ্ছেন।
আবার ঈদে লম্বা ছুটি পড়ায় অনেকে ঘুরতেও গেছেন। ফলে তারা ঈদে দেশে যে কেনাকাটা করতো তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশীয় বিক্রেতারা।
এ বিষয়ে মিরপুর বেনারসি পল্লীর শাড়ি বিক্রেতা আবদুর রাজ্জাক বলেন, “এবার ভারতের অর্ধলক্ষাধিক ভিসা দেওয়া এবং ঈদে নয় দিনের সরকারি ছুটির কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অনেকেই কেনাকাটা করতে ভারতে গেছেন।”