জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার,বন্দুক যুদ্ধে নিহত তিন
2016.08.12

রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যকে বিস্ফোরকসহ আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, সুইসাইড (আত্মঘাতী) স্কোয়াড গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের ঢাকার বাইরে থেকে আনা হয়।
এ ছাড়া দেশের তিন জেলায় কথিত বন্দুক যুদ্ধে গতকাল শুক্রবার তিনজন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর একজন জামায়াত কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সুইসাইড স্কোয়াড গড়তে ঢাকায় নতুন জেএমবি
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট পাঁচ জেএমবি সদস্যকে আটক করে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. ইউসুফ আলী।
আটকৃতরা হলেন; আতিকুর রহমান ওরফে আইটি আতিক, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল করিম বুলবুল ওরফে ডা. বুলবুল, শাহীনুর রহমান ওরফে তারেক ও মতিউর রহমান।
পুলিশের দাবি, রাজধানীতে আরো বড় নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ওই পাঁচজনসহ নয়জনের একটি দলকে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এনেছে জেএমবি।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় সাংবাদিকদের অবহিত করেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, গুলশান ও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য নিহত হয়। ফলে সংগঠনটির হয়ে ঢাকায় নতুন হামলা করার সদস্য কমে যায়।
আর সে ঘাটতি মেটাতে এবার ঢাকার বাইরে থেকে নয় সদস্যকে ঢাকায় নিয়ে আসে তারা। বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। এদের সাংগঠনিক নাম নান্নু, সজীব, ইমরান ও জিন্সি।
মনিরুল ইসলাম জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে কয়েকজন ‘নিউ জেএমবি’ সদস্যকে ঢাকায় আনা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮৫টি ডেটোনেটর (বিস্ফোরক) ও ৮৭৫ গ্রাম জেল উদ্ধার করা হয়।
আটক পাঁচজন বোমা তৈরিতে দক্ষ জানিয়ে মনিরুল বলেন, “আরও বড় ধরনের কোনো নাশকতার জন্যই তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছিল।”
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৩
শুক্রবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে ঢাকার কদমতলী এলাকায় র্যাবের টহল দলের সঙ্গে গোলাগুলিতে সন্দেহভাজন এক মাদক বিক্রেতা নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
নিহতের বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর দাবি করলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি র্যাব।
জাহাঙ্গীর হোসেন বেনারকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, ৫১০টি ইয়াবা ও ২৪ অ্যাম্পুল প্যাথিডিন উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকালই ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম ওরফে পচাঁ (৪৩)।
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার ভোর রাতে ডাকাতির চেষ্টাকালে ডাকাতদলের সঙ্গে র্যাবের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় হত্যাসহ ৮ মামলার আসামি শহিদুল ইসলাম নিহত হয়। বাকিরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে র্যাব।
এদিকে খুলনার কয়রায় আটকের পর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে আনারুল (৪৫) নামে সুন্দরবনের এক বনদস্যু নেতা।
উপজেলার খরখড়িয়া নদীর তীরে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে বলে সাংবাদিকদের জানান কয়রা থানার ওসি শমসের আলী। এসময় একটি দেশি বন্দুক, পাঁচটি কার্তুজ এবং দুটি দা উদ্ধার হয়।
তিনি বলেন, “সুন্দরবনের দস্যুদল আনারুল বাহিনীর এই প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় দশটি মামলা রয়েছে।”
নিখোঁজ জামায়াতকর্মীর লাশ উদ্ধার
এদিকে আটদিন নিখোঁজ থাকার পর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলায় একজন জামায়াত কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কয়েকদিন ধরেই তার সন্ধান চেয়ে আসছিল পরিবার।
হরিণাকুণ্ড থানার ওসি মাহতাব উদ্দিন জানান, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের রাস্তার ওপর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ইদ্রিস আলী ওরফে পান্না হুজুর (৫০) গ্রামের মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।
তার বিরুদ্ধে হরিণাকুণ্ডু ও ঝিনাইদহ থানায় পুলিশ হত্যাসহ নাশকতার ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি মাহতাব।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম অভিযোগ করেন, গত ৪ আগস্ট ইদ্রিসকে স্থানীয় একটি বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকেরা তুলে নিয়ে যায়। যদিও শুরু থেকেই পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান এসব অভিযানের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে বিনা বিচারে বন্দুক যুদ্ধে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের নিহত হওয়ার ঘটনার উদ্বেগ অব্যাহত রেখেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তবে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা তাদের সাফল্য ম্লান করে দিচ্ছে।
“বিনা বিচারে এভাবে সন্দেহভাজন কাউকে হত্যা করাও এক ধরনের অপরাধ। এটা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়,” বলেন সালমা আলী।