ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফর,দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.05.11
2016-05-11-জয়-শঙ্কর620.jpg বাংলাদেশে সফরে এসে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রমানিয়াম জয়শঙ্কর। মে ১১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড.সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। সরকারের পক্ষ থেকে দুই দিনের এ সফরকে দ্বিপক্ষীয় বলা হলেও নিরাপত্তা পরিস্থিতিই বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

তাঁদের মতে, ভারতের কাছে নিরাপত্তা এখন প্রধান ইস্যু। অবস্থানগত কারণে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিমা দেশগুলোর মতো প্রতিবেশী ভারতও বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

এ কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারি সচিব নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফরের পর জয়শঙ্করের এ সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

তাঁদের মতে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিশেষ কোনো বার্তা নিয়ে আসতে পারেন দেশটির বিদেশ সচিব।

বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় বাংলাদেশে পৌঁছান সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। এরপর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ​ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার থিংক ট্যাংক প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ওইদিন বিকেলে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমান সম্পর্ক দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার রোল মডেল। এখন এই সম্পর্ককে আরও গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি জানান, বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন যে, ২০১৫ সালের জুনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরের সময় যে ১১টি উন্নয়ন সহযোগী উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলোর মধ্যে  আটটি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ।

বাকি চারটি প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন ভারতের সচিব। এক বছরেরও কম সময়ে এই অগ্রগতিকে বড় অর্জন বলে মন্তব্য করছে দুই পক্ষ।

প্রেস সচিব জানান, নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে ওই সফর দুই পক্ষের সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া দুদেশের মধ্যে অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ও বৈঠকে গুরুত্ব পায়।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বেশ কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন করা যেতে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সার্ক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উদ্যোগে তাঁর দেশকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হবে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে। এসময় অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, ভিসা জটিলতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানের প্রত্যাশা তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এ সফর প্রসঙ্গে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “গত ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ভারত সফর করেছিলেন। দুদেশের মধ্যকার নিয়মিত সফর বিনিময় ও তার ফলো আপের অংশ হিসেবেই দেশটির পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর ঢাকা সফরে এসেছেন। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তাদের বৈঠকে পর্যালোচনা হবে।”

তবে এ সফরকে শুধু ‘ফলো-আপ’ হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকেরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলোর পাশাপাশি ‘নিরাপত্তা ইস্যু’ বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বেনারকে বলেন, “অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের পাশে ভারত, চীনসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপুর্ণ দেশগুলোর অবস্থান। এই অবস্থানের কারণে এখানে কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হোক তা কেউ চাইবে না। কারণ তাতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীনতা বা টালমাটাল অবস্থা কেউ চাইবে না। তবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভারত বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক।

তাঁর মতে, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দায় স্বীকার তাদেরকেও ভাবিয়ে তুলেছে বলে মনে হয়।

মহিউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে যাতে কোন ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি না হয় সেটি ভারত নিশ্চিত করবে। সে জন্য সরকারকে যত রকমের সহযোগিতা দেওয়া দরকার ভারত দিতে থাকবে। ভারতের সচিব এ বিষয়ক বার্তা নিয়ে এসেছেন বলে আমি মনে করি।”

এদিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশ, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একই মনোভাব পোষন করে বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

গত সোমবার পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এ তিন দেশই একই মনোভাব পোষন করে।  আমরা যে সকল দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করি, সেসব দেশে শান্তি এবং স্থীতিশীলতা দেখতে চাই।”

সাম্প্রতিক সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। সফরকালে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে হর্ষ বর্ধন শ্রীংলার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।

নিশার সফরের পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখ্য উপসহকারী মন্ত্রী (পিডাস) উইলিয়াম ই. টড একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে এই সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং নিশার সফরের ধারবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।