মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে অগ্রগতি হলেও সংবিধান ও ধর্মের সমালোচনা কঠিন
2016.04.20

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বলছে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার দুই ধাপ এগিয়ে ১৪৪তম হয়েছে। এর পাশাপাশি সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সংবিধান কিংবা রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করা বাংলাদেশে একটি অশুভ চিন্তা।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব সাংবাদিক ও ব্লগার ইসলাম ধর্ম বা সংবিধান সম্পর্কে নিজেদের স্ব–আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকাতে পারেন না, তারা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি তৈরি করেন।
এবার বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কমার বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে বলে দাবি করেছে ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠনটি।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে স্পষ্টবাদী অসাম্প্রদায়িক লোকেরা ইসলামি জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। তুলনামূলকভাবে কম সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়তা এবং পুরোপুরি স্পষ্টবাদী অবস্থান নিয়ে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্বের ১৮০টি দেশের গণমাধ্যম পর্যালোচনা করে এবারের সূচক করা হয়। ওই সূচকে ২০১৫ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬তম। এবার তা ১৪৪ তম হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক নয়।
“বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ এগোনোর ফলে প্রমাণ হয়েছে যে, এ দেশে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত,” বেনারকে জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
তাঁর মতে, “মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে সরকারের ভূমিকার এই মূল্যায়ন একটি ইতিবাচক দিক।”
এবার বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪১তম, যা গত বছরে ছিল ৪৯তম। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল ২০তম। ভারত এবার ১৩৩তম, ২০১৫ সালে তারা ছিল ১৩৬তম।
সূচকে সবার ওপরে রয়েছে ফিনল্যান্ড। সূচকে টানা ছয় বছর ধরেই প্রথম স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। পরের অবস্থানে নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড।
১৮০টি দেশের মধ্যে সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকের দেশ ইরিত্রিয়া। এর ঠিক ওপরেই রয়েছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার ওপরে রয়েছে চীন ও সিরিয়া।
সূচকে ফ্রান্স গত বছরের চেয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে ৪৫তম, জাপান ১১ ধাপ পিছিয়ে ৭২তম, অস্ট্রেলিয়া ২৫তম অবস্থান ধরে রেখেছে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ১০৫, ভারত ১৩৩, থাইল্যান্ড ১৩৬, ফিলিপাইন ১৩৮, শ্রীলঙ্কা ১৪১, মিয়ানমার ১৪৩, আফগানিস্তান ১২০, মালয়েশিয়া ১৪৬ ও পাকিস্তান ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে।
সংবিধান ও ধর্ম প্রসঙ্গে
বাংলাদেশে সংবিধান কিংবা ইসলাম ধর্মের সমালোচনা প্রসঙ্গে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের মন্তব্য বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন করেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তাঁর মতে, পৃথিবীর কোন দেশে সংবিধান ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হলে আইনে রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই।
“এ দেশে সংবিধান নিয়ে কড়া সমালোচনা করা যায়। কেউ আপত্তি করে না।ধর্ম নিয়েও সমালোচনা করা যায়। যেটা করা যায় না তা হলো ধর্মকে অপমান করা যায় না। সেটি উচিতও নয়,” জানান লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন," ধর্ম নিয়ে সমালোচনার জবাব সমালোচনার মাধ্যমেই দিতে হবে। হত্যা, খুনের মাধ্যমে নয়।" তবে দেশে জঙ্গি ও উগ্রবাদীদের দৌরাত্ম্য থাকার কথা ঠিক বলে মত দেন তিনি।
এদিকে গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। তবে সমালোচনার ক্ষেত্রে বিশেষত ধর্মীয় ইস্যুতে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা: সম্পর্ক ও সীমারেখা’ শীর্ষক এই বৈঠক আয়োজন করে আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।
“মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়,” বক্তব্যে উল্লেখ করেন আর্টিকেল ১৯ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান।