দেশের সর্ববৃহৎ চুনা পাথর খনি আবিষ্কার
2016.04.21
আনুমানিক ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) টন মজুত সমৃদ্ধ বিশাল আকারের একটি চুনাপাথরের খনি আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি।
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নওগাঁর বদলগাছিতে ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাওয়া এ খনিই এখন পর্যন্ত দেশের ‘সবচেয়ে বড়’ চুনাপাথরের মজুদ বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাণিজ্যিক উত্তোলন লাভজনক প্রমাণিত হলে খনিটি থেকেই প্রায় হাজার কোটি টাকার চুনাপাথর পাওয়া যাবে। যা দিয়ে দেশের সব সিমেন্ট কারখানার চাহিদা মেটানোর সম্ভব।
শিগগিরই ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর সেখানে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
চুনাপাথরের ওই খনির নিচে একটি নতুন ভূ-কাঠামোয় কয়লা রয়েছে বলেও ধারণা করছে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর। তাই সেখানে কয়লা খনির সন্ধানে চুনাপাথরের স্তর ভেদ করে আরও গভীর কূপ খনন করা হচ্ছে।
‘সর্ববৃহৎ’ চুনাপাথর খনি
বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের ডাক পড়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানেই সুখবরটা শোনান তিনি। বলেন, ‘আপনাদেরকে একটা সুখবর চাই, কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চুনাপাথর খনি আবিষ্কৃত হয়েছে।’
তিনি জানান, বদলগাছির তাজপুর গ্রামে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ২ হাজার ২১৪ ফুট গভীর থেকে চুনাপাথরের স্তর শুরু হয়েছে। চুনাপাথরের স্তর শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৬১ ফুট খনন হয়েছে। আরও গভীর পর্যন্ত চুনাপাথর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খনন কাজ অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এই স্তর আরও অনেক পুরু হবে। পূর্ণাঙ্গ ড্রিলিং শেষে জানা যাবে খনিতে কী পরিমাণ লাইম স্টোন আছে। এরপর সমীক্ষা চালানো হবে।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, ওই খনির নিচে একটি নতুন ভূ-কাঠামোয় কয়লা রয়েছে বলে ধারণা করছে জিএসবির বিশেষজ্ঞরা। তাই সেখানে চুনাপাথরের স্তর ভেদ করে আরও গভীর কূপ খনন করে চলেছেন তাঁরা। লক্ষ্য-চুনাপাথরের নিচে কয়লা খনির সন্ধান লাভ।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে লাগবে দুই বছর
তবে এই চুনা পাথর বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে নজরুল হামিদ বলেন, ‘এই খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে কি না সে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে এখনো দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, সমীক্ষার পর খনি থেকে চুনা পাথর উত্তোলন লাভজনক বিবেচিত হলে বাণিজ্যিক উত্তোলনের পদক্ষেপ নেবে সরকার।
চাহিদা মিটিয়ে থাকবে রপ্তানির সুযোগও
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় ত্রিশটিরও বেশি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। যারা বছরে প্রায় দুই কোটি টন সিমেন্ট উৎপাদন করে। এসব কারখানার বেশিরভাগই ক্লিনকার (কাদামাটি ও চুনাপাথরের মিশ্রণ পুড়িয়ে তৈরি) আমদানির মাধ্যমে কাঁচামালের চাহিদা মেটায়। এ ছাড়া মেঘালয় থেকেও সরাসরি পাথর আমদানি করে কিছু সিমেন্ট কোম্পানি।
সরকার মনে করছে, আবিষ্কৃত খনির চুনাপাথর উত্তোলনযোগ্য হলে তা দেশের এসব সিমেন্ট কারখানার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ থাকবে।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, চুনাপাথর মাটির কতটা গভীরে আছে তার ওপর নির্ভর করে এর উত্তোলন লাভজনক হবে কি না। এ জন্য সব কিছুর আগে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত যে নমুনা পাওয়া গেছে, তা যথেষ্ট ইতিবাচক বলে মত দেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল উদ্দিন বেনারকে বলেন, ‘খননের পর আমরা যে নমুনা পেয়েছি, তার মান অত্যন্ত ভালো। এটি আমাদেরকে খনিটির বিষয়ে আশাবাদী করে তুলছে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে আরও খননের পর মজুদের পরিমাণ সম্পর্কে জানা এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ওপর।’
এ বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীও বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার পর যে মতামত পেয়েছি তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এ লাইমস্টোনের মান অনেক ভালো।’
এর আগেও দেশের কয়েকটি স্থানে চুনাপাথর খনি আবিষ্কৃত হয়। তবে ব্যয়বহুল হওয়ায় সে সম্পদ তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।