মালয়েশিয়ায় পুলিশের গুলিতে দুই বাংলাদেশি অপহরণকারী নিহত

হাদি আজমি ও জাম ইউসা
2019.02.13
কুয়ালালামপুর ও কোটা কিনাবালু, মালয়েশিয়া
190213-MY-BD-shooting-620.jpg মালয়েশিয়া পুলিশের গুলিতে নিহত এক সন্দেহভাজন অপহরণকারীর লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
[সৌজন্যে: মালয়েশিয়া পুলিশ]

মালয়েশিয়ায় অপহরণচক্রের দুই সন্দেহভাজন বাংলদেশি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এই দুজন অন্তত ১৩ বাংলাদেশি শ্রমিক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।

মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরের নিকটস্থ এলাকার একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানের সময় অপহৃত এক বাংলাদেশি শ্রমিককেও উদ্ধার করা হয়।

“সন্দেহভাজনরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এর উত্তরে পুলিশ গুলি চালালে তারা মারা যায়,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন কুয়ালালামপুরের পুলিশ প্রধান মাজলান লাজিম।

ঘটনাস্থল থেকে একটি আধাস্বয়ংক্রিয় পিস্তল ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি শ্রমিককে ফ্রেব্রুয়ারির ৮ তারিখ কুয়ালালামপুরের একটি রাস্তা থেকে অপহরণ করে কাজাং জেলার একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানান পুলিশ প্রধান। এরপর দেশে অপহৃতের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গত দাবি করে অপহরণকারীরা, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪১ লাখ টাকার বেশি।

তিনি জানান, অপহৃত শ্রমিককে আটকে রাখার স্থানের বিষয়ে গোপন সূত্রে তথ্য পাবার পর তাঁরা অভিজান শুরু করেন।

নিহত দুই সন্দেহভাজন এর আগে দুই বাংলাদেশি শ্রমিক হত্যার সাথেও জড়িত বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। জানুয়ারির মাঝামাঝি ওই দুই শ্রমিকের একজনের লাশ কুয়ালালামপুরের একটি ময়লার স্তূপে এবং অন্যজনের লাশটি সেলানগর রাজ্যের একটি নদীতে পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান মাজলান।

তিনি বলেন, “জানুয়ারির ১৩ তারিখ ওই দুই মৃতদেহ পাওয়ার পর কুয়ালালামপুর পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে যে, ওই সন্দেহভাজনরাই হত্যাকাণ্ডগুলোর সাথে জড়িত।”

অভিজানের পর পুলিশ অপহরণচক্রের সাথে জড়িত আরো দুই মালয়েশিয়ানকেও গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, তদন্তে দেখা গেছে যে এই অপহরণচক্রটি ২০১৭ সাল থেকে অন্তত ১৩টি অপহরণের সাথে জড়িত। কুয়ালালমপুর এবং সেলানগর রাজ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরাই মূলত এদের অপহরণের শিকার।

অপহরণ করে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তাদের কাজ। এর মাধ্যমে অপহরণকারীরা ২৫ লাখ রিঙ্গিত বা পাঁচ কোটি ১৫ লাখ বাংলাদেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।

তবে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকসহ পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি অপহরণকারী কারোই নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি মালয়েশিয়ার পুলিশ।

এদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা এনজিও মালয়েশিয়া বাংলাদেশ ফোরাম।

সংস্থাটির নির্বাহী সদস্য নাহিদুল হক বেনারকে বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক কিংবা দেশে তাঁদের পরিবার অর্থবান নয়, তারপরেও মুক্তিপণ হিসেবে দেড় দুই লাখ রিঙ্গত চাওয়ার জন্য এদেরকে বেছে নেওয়ার কারণ কোনোভাবেই বোধগম্য নয়।

“কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশি দূতাবাসের উচিত মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বসে এই দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা করা,” বলেন নাহিদ।

তবে এই প্রসঙ্গে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের তথ্যমতে, ওই বছর দেশটিতে ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।