দেশে ফিরলেন লিবিয়ায় আটকে পড়া ১৫৭ বাংলাদেশি
2018.09.26
ঢাকা
আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার কারাগারে বন্দী থাকা ১৫৭ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশে লিবিয়ায় জড়ো হওয়ার পর ধরা পড়া এসব বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে লিবিয়ায় আটকে পড়া ২৩৪ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার দুপুর ২টায় একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ১৫৭ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
বাকি ৭৭ জনকেও খুব শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে আনার সকল ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, দালালের মাধ্যমে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করতে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের এসব নাগরিকেরা লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। এ বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশে সুদান, মিসর, আলজেরিয়া, দুবাই ও জর্ডান থেকে লিবিয়ায় একত্রিত হয়েছিলেন তাঁরা। পরে সেখানে আটক হন। আটকের পর থেকে তাঁরা কারাগারে বন্দী ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আই.ও.এম-এর সমন্বিত তত্ত্বাবধানে এসব বাংলাদেশি নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইওএম তাঁদের লিবিয়া থেকে দেশে আনার খরচ বহন করছে।
আইওএম-এর ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার চৌধুরী আসিফ মাহমুদ বিন হারুন বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ সরকার আমাদের কাছে এসব বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে সহায়তা চেয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁদের ফেরত আনা হয়েছে।”
“যারা ফেরত এসেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভূমধ্যসাগরে ছিলেন। অনেকেই উদ্ধার হওয়ার পরে ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন,” বলেন তিনি।
“ফেরত আসা ১৫৭ জনের মধ্যে ১০ জন অসুস্থ ছিলেন, যাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একজন চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা পত্র দিয়েছেন এবং সকল যাত্রীই ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছেছেন,” জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
“তারা সবাই পরিবারের কাছে পৌঁছেছেন। তবে এখন আমাদের প্রাধান্য তাঁদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা। এক মাসের মধ্যে আইওএম’র পক্ষ থেকে তাঁদের সাথে আবার যোগাযোগ করা হবে। এবং পরবর্তীতে পুনর্বাসন কতটুকু সফল হচ্ছে সেটাও পর্যবেক্ষণ করা হবে,” বলেন আসিফ মাহমুদ।
আলাপকালে তিনি জানান, আইওএম’র ডিরেক্টর জেনারেল লিবিয়া সফরের সময় যে সকল অভিবাসী এভাবে উদ্ধার হচ্ছেন তাদেরকে ডিটেনশন সেন্টারে আটকে না রেখে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরত পাঠাতে দেশটির সরকারকে আপিল করেছিলেন। সেটার পরেই বাংলাদেশ সরকার আমাদের কাছে সহায়তা চায়।
জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা জানান, মানব পাচারকারীরা ইউরোপে অবৈধভাবে লোক পাঠাতে এখন লিবিয়াকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে লিবিয়া থেকে নৌপথে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালি ও গ্রিসে ঢোকার চেষ্ট করে অভিবাসীরা। অনেকে লিবিয়া হয়ে স্পেনে যাওয়ার চেষ্টাও করে।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, লিবিয়া উপকূল থেকে নৌকায় করে ইউরোপে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি নিখোঁজ ও আটক হওয়ার কয়েকটি ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, লিবিয়ার কোস্টগার্ড গত ১৭ জুন ও ২৩ জুন দুটি নৌকায় থাকা ১৪৬ যাত্রীকে আটক করে। পরে তাঁদের দেশটির অভিবাসন সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোতে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। এছাড়া ভূমধ্যসাগর ব্যবহার করে ইউরোপে প্রবেশকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান চতুর্থ বলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়।
লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য সার্বক্ষণিক কন্ট্রোলরুম
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, লিবিয়ায় সরকার সমর্থক এবং সরকার বিরোধী বেশ কয়েকটি মিলিশিয়া বাহিনী বিভিন্ন এলাকার কর্তৃত্ব দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্টেট অব অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চলমান এই ঘটনায় বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে।
ইতোমধ্যে দূতাবাসের ফেইসবুক পেজে সকল বাংলাদেশি প্রবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সতর্কতামূলক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যেকোনো সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের সহায়তায় লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খুলেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে কন্ট্রোল রুমের নম্বর ও ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হয়। কন্ট্রোল রুমের নম্বর: ০০২১৮৯১৩৭৭৬৯১৪, ০০২১৮৯১৬৯৯৪২০৭, ০০২১৮৯২৬২৯৯২৭০। ইমেইল lybialw@yahoo.com, bdtripoli@yahoo.com, ashraful_tax@yahoo.com