মুখ্যমন্ত্রী মমতার মনোমুগ্ধকর শপথ
2016.05.27

দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল শুক্রবার কোলকাতার রেড রোডে এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শপথ আয়োজন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে বিপুল জয় পায় তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশাপাশি রাজ্য তৃণমূল সরকারের ৪১ জন মন্ত্রীও গতকাল শপথ গ্রহণ করেছেন।
শপথ অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ দিতে ২০ হাজার মানুষকে বিনা নিমন্ত্রণে অনুমতিপত্র ছাড়াই অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। ভারতের শীর্ষ বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার একটি শিরোণাম ছিল, ‘নক্ষত্র সমাবেশে মমতার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু।’
শপথবাক্য পাঠের শুরুতে মমতা বলেন, ‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঈশ্বর ও আল্লাহর নামে শপথ করিতেছি যে...।’ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মমতার এই বাক্যটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠান ঘিরে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। সকাল থেকেই রেড রোডে সাজ সাজ রব ছিল। ছিল কড়া নিরাপত্তার বলয়। রাজ্যের সচিবালয় ও হাইকোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী রেড রোড নিরাপত্তা চাদরে ঘিরে ফেলা হয়।
অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তবগে।দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী, প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতা ও বলিউড-টালিউডের তারকা। বিজেপি দলীয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও বিজেপির মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার অভিযোগে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরা এলেও রাজ্য বিজেপি নেতারা অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন শিল্পমন্ত্রী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু। জাপানে অবস্থান করার কারণে মমতার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার পাঠাতে ভুল করেনি বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হতে না পারলেও গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় তাঁর উপহার হিসেবে ২০ কেজি পদ্মার ইলিশ পৌঁছায়।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের আশাবাদ
২০১১-এর সেপ্টেম্বরে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলে মনমোহন সিংহের সঙ্গে তাঁর বাংলাদেশ সফর বাতিল করেন মমতা। ফলে আটকে যায় তিস্তা চুক্তি। এতে মমতার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় বাংলাদেশের একাংশ।
কিন্তু গত বছর জুনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঢাকা গিয়ে সেই ক্ষত অনেকটা মেরামত করে ফেলেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার আলো দেখছে।
মমতার বিদায়ী সরকারের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আগে যা হয়েছে, হয়েছে। এখন নতুন সরকার বিষয়টাকে আবার নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতেই পারে। যদিও পুরোটাই মুখ্যমন্ত্রীর এখতিয়ারে!”
বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এই মুহূর্তে এক অন্য উচ্চতায় রয়েছে। সম্পর্কের খচখচানি শুধু তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে। দুটি বিষয়েই মমতার আপত্তি ছিল তীব্র। সেই আপত্তি এখন সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে সীমান্ত চুক্তি হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বেনারকে বলেছেন, বিপুল ভোটে জিতে এবার ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। তিনি বাংলাদেশকে তিস্তা চুক্তি করার আশা দিয়ে গেছেন এবং আস্থায় থাকতে বলেছেন। তাই তিস্তা চুক্তি হবে—এমনটি আশা করা যায়।
কেমন হলো মন্ত্রিসভা?
কলকাতার প্রশস্ত রেড রোডে শপথ অনুষ্ঠান হয়। এর আগে এত বড় ও জমকালো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখেনি পশ্চিমবঙ্গ। মমতার সরকারে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে ২৯ জন ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১৩ জন শপথ নিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ৫ জন স্বাধীন দায়িত্বে থাকবেন।
এবারের মন্ত্রিসভায় ১৮ জনই নতুন মুখ। মালদহ আর দার্জিলিং থেকে তৃণমূলের কেউ জেতেনি। ফলে এই দুই জেলা বাদে বাকি সব জেলার প্রতিনিধিত্ব নিয়েই নতুন মন্ত্রিসভা গড়লেন মমতা
মমতার এবারের মন্ত্রিসভায় সাতজন মুসলিম, একজন খ্রিষ্টান ও চারজন আদিবাসী প্রতিনিধি জায়গা পেয়েছেন। মমতাকে নিয়ে মন্ত্রিসভায় চারজন নারী রয়েছেন।
গতবারের মন্ত্রিসভার নয়জন সদস্যকে এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। আর আটজন পরাজিত হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে নানা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের নাম আসায় কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের অনেকে ক্ষমতা বদলের কথা বলেছিলেন। বাস্তবে দেখা গেল, আগের চেয়ে আরও বেশি আসন নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।