নেপালের উদ্ধার কাজে ভারত এগিয়ে, চীন ও মার্কিন সাহায্যও চলছে
2015.04.30

নেপালে ভয়াবহ ভুমিকম্পের পর ৫ দিন গড়িয়ে গেলো মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। ভারত সহ সকল প্রতিবেশী ও মার্কিনী ও ইউরোপীয় দেশ গুলোও জোরদার ত্রাণ সাহায্য নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে।
ভারত নিঃসন্দেহে বৃহত প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বেশি দায়িত্ব নিয়ে নেপালের ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ সাহায্য করতে অগ্রসর হয়েছে। খবর গণমাধ্যমের।
নেপালের রাজধানী থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে ভুমিকম্পের কেন্দ্রে ৭.৮ মাত্রার আঘাত হানার পর শনিবার থেকেই ভারত প্রতিবেশী দেশে অপারেশন মৈত্রীর কাজ শুরু করে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্ধার কাজের আদেশ দিলে ত্রাণ কর্মিরা সামরিক বিমান পরিবহনে করে সাহায্য সামগ্রী নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত সি-১৭ বিশাল কার্গো বিমানে রিলিফ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনে।উদ্ধার কর্মিদের সাথে মেডিক্যাল টিমও সেখানে যায়। প্রাধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, নেপালে মৃত্যু সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারে পৌঁছেছে। আহত হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার। এই ভুমিকম্পের আঘাত ভারত ও বাংলাদেশে ৬০ জনের উপরে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
নেপালের এই মহা-দূর্যোগ সামাল দেবার জন্য জাতিসংঘ ৪১৫ মিলিয়ন ডলারের জরুরী সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। নেপালে অবস্থিত জাতি সংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ম্যাকগোল্ডরিক এএফপিকে জানায়, “এটা হবে দীর্ঘ উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম।অন্ততঃ তিন মাস লাগবে উদ্ধার ও পূনর্বাসন প্রক্রিয়ায়”।
অন্যান্য দেশের মধ্যে চীন, মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকেও সাহায্য ঘোষণা ও তৎপরতা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ কর্মিদের নিয়োজিত করেছে।
ইইউ’র তরফ থেকে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলারের সাহায্য তাৎক্ষনিক প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এয়ার বাস নির্মাতাদের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা বিমান ও হেলিকপ্টার পাঠাবে ত্রাণ সাহায্য পৌছানোর জন্য।
আসিয়ানের পক্ষ থেকে তাদের আওতাভুক্ত দেশগুলোকে নেপালে সাহায্যের হাত বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া তাৎক্ষনিক ভাবে ১ মিলিয়ন ডলার মানবিক সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে নেপালের আরেক প্রতিবেশী চীনও ব্যপক সাহায্য নিয়ে নেমে পড়েছে।তাদের ৬২ জনের উদ্ধার টিম এখন নেপালে। জানিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চীনা সংবাদ সংস্থা জিনহুয়া জানায়, তাদের দিকে তিব্বতে ভুমিকম্পে ২৫ জন মারা গেছে এবং ৩৮৩ জন আহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, চীন নেপাল সরকারের সঙ্গে অতি আগ্রহের সঙ্গে সড়ক পথ করে নিয়ে বাণিজ্য সহযোগিতার প্রচেষ্টা নিয়ে এগুচ্ছে এবং চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বত থেকে যাতে তিব্বতীরা নেপালে গিয়ে আশ্রয় না পায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নেপালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে চীন তার ভবিষ্যতের পথ পরিস্কার করে রাখছে।খবর এপি’র।
পিকিং ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাউথ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওয়াং লিয়ান এপিকে জানান, “চীন যখন তার দায়িত্ব পালন করছে এতে করে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব অবশ্যই বাড়বে এবং নেপালের জনগনের সদিচ্ছা চীনের প্রতিও তৈরি হবে”।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও নেপালে ত্রাণ সাহায্য পাঠানো শুরু করেছে। বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাকে ফোনে তার শোক প্রকাশ করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ‘যা করা সম্ভব’ ত্রাণ সাহায্যের ব্যাপারে তাই করবে। খবর এএফপি’র।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাৎক্ষনিক ভাবে ১ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের কথা জানিয়েছে। পরে ইউএসআইডি এই ঘোষণা পরিবর্তন করে ১০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের কথা জানায়।মঙ্গলবার নাগাদ ১৩০ জনের একটি দূর্যোগ মোকাবেলার টিম নেপালে পৌছেছে।
এই টিমের প্রথম উদ্ধারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কাঠমান্ডুতে ধবংশযজ্ঞের মধ্য থেকে একটি টিনএজ কিশোরকে ভুমিকম্পের ৫ দিন পর জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
নেপালের পুলিশ অফিসার এল বি বাসনেট এপিকে বলেন “ আমি যখন তার দিকে যাই সে সাড়া দিয়ে আমাকে ধন্যবাদ দেয়। সে তার নাম ও ঠিকানা জানায়, আমি তাকে পানি পান করতে দেই, আমি তাকে আশ্বাস দেই যে আমরা তার পাশেই আছি”।