নেপালে ধ্বংশস্তুপের মধ্যে জীবিতরা আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে

নয়াদিল্লি থেকে আলতাফ আহমেদ
2015.05.01
NP-quake কাঠমান্ডুতে এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে একটি ছেলে খাবার পাবার জন্য চেষ্টা করছে। ১মে,২০১৫
এএফপি

নেপালে ভুমিকম্পের পর এক সপ্তাহ পার হলো,ধ্বংশজজ্ঞের মধ্যে বেঁচে যাওয়া মানুষদের দূর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে। ত্রাণ ও উদ্ধার কাজও হচ্ছে ব্যহত।

জাতি সংঘের এক হিসেব দেখিয়ে রয়টার জানায়, নেপালের ভুমিকম্পে অন্তত ৬ লাখ ঘর-বাড়ি ধ্বংশ হয়েছে। নেপালের অর্থমন্ত্রী রাম শরন মাহাত জানিয়েছেন  পুনর্বাসন ও পূননির্বাচন কাজে প্রাথমিক ভাবে ২ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

ললিতপুরের কলেজ ম্যানেজমেন্টের প্রোগ্রাম কর্ডিনেটর বসন্ত ধকল বৃহস্প্রতিবার বেনার নিউজকে জানান, “ সরকারি হিসেবে,কাঠমান্ডু থেকে ৪ লাখ লোক বেরিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে। মৃতদের গলিত দেহ থেকে দূর্গন্ধে কেউ থাকতে পারছে না”।

রিলিফের কাজে জড়িত বসন্ত আরো বলেন, “ উদ্ধার কর্মিদের প্রথমেই উচিত মৃতদেহ সরিয়ে পাহাড়ে মাটির নীচে কবর দেয়া। কিন্তু তাদের দেহগুলো ব্যাপক জঞ্জালের স্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকায় সহজে বের করা যাচ্ছে না। তবে উদ্ধার টিম গুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমেই কেবল মৃতদেহ উদ্ধার ও মাটি চাপার কাজ শেষ করা যায়”।

তার মতে, কখনো বৃষ্টি কখনো রোদের মধ্যে সময় গড়িয়ে গেছে আর দূর্গন্ধ বেড়েছে।

ইসরায়েল ভিত্তিক ত্রাণ সংস্থা ইসরা-এইড মঙ্গলবার থেকে অকুস্থলে কাজ শুরু করেছে। তাদের ধারনা, মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।কারণ গ্রামের দিকে এখনো নজর দেয়া হচ্ছে না, অনেকে সেখানে যাচ্ছেনই না।

সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬০০০ অতিক্রম করেছে বলা হচ্ছে। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী বাম দেব গৌতম জানিয়েছেন, আবাসিক এলাকায় শত শত ঘর-বাড়ি ধূলায় মিশে গেছে, মৃতদের খুজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।


এদিকে, ইইউ জানিয়েছে ইউরোপের ৯ হাজার পর্যটক নেপাল সফরে ছিলো, তাদের মধ্যে ১ হাজার জনের হদিস মেলেনি। ফ্রান্স সরকার জানিয়েছে, তাদের ৩ জন নাগরিক নপালের দূর্যোগে পড়ে মারা গেছে।


ইসরা-এইডের কোঅর্ডিনেটর সুদিশ নিরৌলা বেনার নিউজকে জানান, রাজধানী শহরকে মরুভুমির মতো জনশুন্য লাগছে কারণ দোকান-পাট বন্ধ মানুষ জন তাবুর মধ্যে নীরবে অবস্থান করছে। বলেন, “ খাদ্য দূস্প্রাপ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে, সরকার দোকানদারদের দোকান খুলতে বলছে, কিন্তু তারা লুট হবার ভয়ে কেউ খুলছে না”।

এই কেওয়াজের মধ্যে ভালো খবর হচ্ছে ত্রাণ কর্মিরা ত্রাণ সাহায্য বিতরণ করছে, অজস্র উদ্ধার টিম নেমে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, “আমাদের টিম বৃহস্প্রতিবার সকালে কাঠমান্ডুর একটি হোটেলের ধ্বংশস্তুপের মধ্যে কৃষ্ণা দেবি খাদকা নামের ২৫ বছর বয়েসি নারীকে খুজে পেয়েছে। নেপালি সেনা সদস্য ও নরওয়ের উদ্ধার টিমের সাহায্য নিয়ে দূর্যোগের ৬ দিন পর তাকে বের করা হয়”।

নিরৌলা বলেন, “ উদ্ধার কর্মিদের জন্য কাজ করা খুব জটিল হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো জায়গায় জীবিতরা উদ্ধার কর্মিদের জোর করছে জঞ্জালের স্তুপ সরিয়ে তাদের চাপা পড়া আত্নীয়দের দেহ বের করে আনার জন্য। এবং তারা শেষবারের জন্য মৃতদের মুখ দেখে সৎকার করতে চাইছে।এতে স্বাভাবিক উদ্ধার কর্ম ব্যহত হচ্ছে এবং সময় লাগছে। মৃতদের সংখ্যা এতে করে বাড়ছে।

উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরন কেবল মাত্র কাঠমান্ডুতে সীমাবদ্ধ থাকছে। আমলাদের কারসাজি ও সময়ক্ষেপনের জন্য পল্লী এলাকা অবহেলার শিকার হচ্ছে। সাহায্য সংস্থাগুলো ও উদ্ধার টিমের মধ্যে সমন্বয় করে গ্রামের উদ্ধার কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। সরকারের বিরুদ্ধে গ্রামীন এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে, জানাচ্ছে ক্ষোভ। বিশেষ করে গোরখা জেলায় যেখানে ভুমিকম্পের কেন্দ্র বলে চিহ্নিত হয়েছে, সেখানেই কাজের গতি শ্লথ, উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরন ধীর গতিতে চলছে।

রিলিফ কাজে যুক্ত ধাকাল বেনারকে জানান, “গোরখার লুনজাং ও নোয়াখুত এলাকার বেঁচে যাওয়া মানুষেরা ঈশ্বরের কৃপার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা জানতে পারছিনা সেখানে মৃত ও আহতদের সংখ্যা কত। লুনজাং-এ অসংখ্য হাতের মধ্যে সামান্য রিলিফ তুলে দেয়া সম্ভব হয়, কিন্তু দ্রুতই তা শেষ হয়ে যায়।আরো পানি ও খাবার সেখানে জরুরি।

কাঠমান্ডুতে দোকান রয়েছে দিল্লির এক ব্যবসায়ী অনিল কেদিয়া বেনারকে জানান, “ গোরখা থেকে আমার এক কর্মচারি বার বার কল করছে সাহায্যের জন্য, কিন্তু আমি তাকে দুঃখিত অপারগ বলে জানাতে বাধ্য হয়েছি। গোরখা জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। হেলিকপ্টার ছাড়া সেখানে যাওয়া সম্ভব না। সেখানে তাবু, খাবার ও পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে”।

নেপালের তথ্যমন্ত্রী মিনেন্দ্র রিজাল সিএনএন’কে জানান, “ দূর্গত এলাকায় প্রাথমিক পূনর্বাসনের জন্য ৫ লক্ষ তাবু দরকার।যদিও রিলিফ অপারেশন চলছে। কিন্তু স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে অনেক কিছুর দরকার হবে”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।