মার্কিন কর্মচারী হত্যার বিচারিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
2016.05.05

মার্কিন সরকারের কর্মচারী ও সমকামিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা জুলহাজ মান্নানের নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে সেকথাই স্পষ্ট করে জানালেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল।
এ ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।
চতুর্থবারের মতো গত বুধবার বাংলাদেশ সফরে আসেন নিশা। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে ব্যস্ত সময় পার করেন মার্কিন এই কূটনীতিক। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়ের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিশা দেশাই বলেন, “আমরা জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। তিনি মার্কিন সরকারের একজন কর্মী ছিলেন। বাংলাদেশে যেসব সাহসী লোকজন এখানকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন, তাঁদের মৃত্যুতেও আমরা মর্মাহত।”
তিনি বলেন, “জুলহাজ মান্নানের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সরকার যা যা করছে, সেসব বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে আমাদের যেখানে সহযোগিতা করার সুযোগ আছে, সেখানে আমরা হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। তবে আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং দোষীদের খুঁজে বের করার যে চেষ্টা বা প্রয়াস চলছে, তার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে চাই।”
সহযোগিতার কথা বললেন নিশা
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেন নিশা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “বৈঠকে সাম্প্রতিক গুপ্ত হত্যার বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন নিশা।”
ইহসানুল করিম বলেন, “বৈঠকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মোকাবেলায় বেটার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।” সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে এক টুইট বার্তায় নিশা দেশাই বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জুলহাজ মান্নান এবং অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও এ ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।”
আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে নিশা দেশাই বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের যোগাযোগ আছে। আর যুক্তরাষ্ট্র এই যোগাযোগ ভেঙে দিতে চায়।”
মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, “সাম্প্রতিক বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা এবং আইএস’র বার্তা এসেছে। সেসব বিষয় আমরা বিবেচনায় নিয়ে থাকি। এসব সংগঠন হয় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে কিংবা এখানকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটা যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে।”
বাংলাদেশে আইএস নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়েদার কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই বলে নিশা দেশাইকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদেরকে জানিয়েছি, বাংলাদেশে বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়েদার কোন সাংগঠনিক কোন কাঠামো নেই।”
এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য এদেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠনকে দায়ী করে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। বেশিরভাগ হামলাই চিহ্নিত করা হয়েছে।”
এছাড়া বাংলাদেশের অনেক ব্লগার ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখেন বলে নিশাকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ধরনের লেখা যেমন বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী, তেমনি সমকামীতাও অপরাধ বলে তাঁকে অবহিত করেন তিনি। নিশা বিষয়টি স্বীকার করেই সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সমকামীতা বা ‘আনন্যাচারাল সেক্স’ আমাদের ধর্মে, সমাজে নিষিদ্ধ। কাজেই এদেশে এটার প্রচার প্রচারণা করা অপরাধ, এ থেকে সংযত হওয়া উচিত। তবে আমরা কাউকে হত্যা করা সমর্থন করিনা।”
যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়ে সংশয়
যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়েও দেশটির নাগরিক অভিজিত হত্যা তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কতটুকু সফলতা আনবে সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। জুলহাজ মান্নান হত্যার ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি হবে জানিনা, তবে অতীতে দেখেছি খুব বেশি সাফল্য আসেনি। সেদিক থেকে একটা সংশয় থেকেই যায়।”