খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঢাকায় নিশা দেশাই
2016.05.04

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোন করার কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। তিনদিনের এ সফরে বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনসহ নিরাপত্তা ইস্যু বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
বুধবার বাংলাদেশে এসেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন মার্কিন সিনিয়র কূটনীতিক নিশা দেশাই। সফরের প্রথমদিনেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের সঙ্গে মত বিনিময় করেন তিনি।
এসময় নিশা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নানসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও জননিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই কূটনীতিককে জানানো হয়েছে যে, প্রতিটি ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। এমনকি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিতে সরকারের আপত্তি নেই বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক বিভিন্ন সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে জন কেরিও এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন।
তদন্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহায়তাকে স্বাগত জানালেও বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে এও বলা হচ্ছে যে, দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা তদন্তে বিদেশি সংস্থাটির সেই অর্থে কোনো ভূমিকা নেই। তারা শুধু সহায়তা বা বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নাগরিক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহায়তা করেছিল এফবিআই। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও সেই তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ দুটি হত্যাকাণ্ড গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কারণ, জুলহাজ মান্নান সাবেক মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ছিলেন। আর অভিজিৎ রায় তাদের দেশের নাগরিক ছিলেন।
প্রথম দিনের বৈঠক শেষে নিশা দেশাই এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, “সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা দমনে বাংলাদেশের যৌথ অংশিদারিত্বের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে।”
উল্লেখ্য, ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
নিশা বাংলাদেশে আসার একদিন আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব হত্যাকাণ্ড তদন্তে এফবিআইয়ের এখতিয়ার নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কোনো ঘটনা তদন্তে এফবিআইয়ের এখতিয়ার নেই। এ দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটলে একমাত্র পুলিশই তার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। তবে এফবিআই তদন্তে সহায়তা করতে পারে। বিশেষজ্ঞ মতামতও চাইলে দিতে পারে।”
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড তদন্তে মার্কিন সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, “অভিজিৎ মার্কিন নাগরিক ছিলেন বলে তারা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তা দিতে চেয়েছিল। তখন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা কিছু ছবি দিয়েছেন, আর তা থেকে পুলিশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে।”
প্রশাসনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে নিশা দেশাইয়ের এই সফর বলে মনে করছেন অনেকে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কোন চাপে নয় বরং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই বাংলাদেশকে সকল ঘটনার তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপের কিছু নেই। সমস্যাটা আমাদের। তাই সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আমাদেরই ভাবতে হবে।”
তদন্তে দেশটির সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে, সেই ধরনের সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্তটা আমাদের, আমরা কী ধরনের বা কতটুকু সহযোগিতা চাইবো।”
“এসব হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা কেন খুন হলেন বা দোষী কারা তা আমাদের বের করতে হবে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিক কিংবা কর্মকর্তার জন্য হয়ত উদ্বিগ্ন হবে। কিন্তু সবার আগে তারা বাংলাদেশের নাগরিক। এখানেই খুন হয়েছেন,” বলেন হুমায়ুন কবীর।
গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে দিনদুপুরে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন ইউএসএআইডি’র কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়।
এর তিনদিন পর আসামিদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি। তখন তিনি নিশাকে পাঠানোর কথা বলেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন নিশা দেশাই। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও সাক্ষাত করবেন তিনি।
ধারণা করা হচ্ছে, অনুষ্ঠিতব্য এসব বৈঠকেও জুলহাজ মান্নানসহ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপত্তা ইস্যু বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।
এদিকে গতকাল বুধবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, “আমাদের আশ পাশে কিছু ঘটনা ঘটছে। মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা হত্যার ধরণ দেখে যদি সবগুলোকে এক করে দেখি, তাহলে ভিন্ন পরিস্থিতি প্রতিভাত হয়। এদেশেরই কিছু লোক মানুষ হত্যার শিল্প যথাযথভাবে রপ্ত করেছে।”
তাঁর মতে, এরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথ রুখে দিচ্ছে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সমাজ থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।