শিক্ষা কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন,প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.18
Primary-School-System620.jpg রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয় একটি প্রতিষ্ঠান। মে ৬,২০১৬।
ফোকাস বাংলা

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে এমনকি তারও আগে থেকে দেশে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপ্তি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বহাল রয়েছে।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নির্ধারণের পাশাপাশি সব ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এখন থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। তবে নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক হবে কিনা, তা চূড়ান্ত হয়নি।

বুধবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান যৌথভাবে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালুর লক্ষ্য ছিল। তার আগেই কাজ শুরু হয়েছে, যাতে ২০১৮ সালের মধ্যে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। পাঠ্যক্রম, শিক্ষক, জনবল ও ব্যবস্থাপনা—সব কিছু ঢেলে সাজাতে হবে।

“সিদ্ধান্ত হয়ে গেলেও এখন কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে অনুমোদন চাওয়া হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে,” বেনারকে জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এটি একটি বড় মৌলিক পরিবর্তন। এতবড় পরিবর্তন এর আগে হয়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের তারিখে কার্যক্রম শুরু করা হবে। নতুন অর্থবছরের আগেই এ–সংক্রান্ত সবকিছু ঠিক করে ফেলা হবে।”

বড় প্রশ্ন—সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কিনা

জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুপারিশ না থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট নামে দুটি পাবলিক পরীক্ষা চালু করেছে সরকার। এ নিয়ে শিক্ষবিদদের প্রবল আপত্তি রয়েছে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, রাশেদা কে চৌধূরীসহ অনেকেই পঞ্চম ও অষ্টম ​শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা চালুর বিরোধীতা করে আসছেন।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে পঞ্চম শ্রেণির বদলে অষ্টম শ্রেণি ধরা হবে প্রাথমিকের সমাপনী কাল। এখনকার মতো প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কি-না, থাকলে তা কীভাবে—সেই প্রশ্নের জবাব গতকাল পর্যন্ত মেলেনি।“এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পরে জানাবে,” বেনারকে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকালের সভায় শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তিনি একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান। মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সমালোচনা করে বলেন, এই পরীক্ষা বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

“যত দ্রুত সম্ভব পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে শিশু–কিশোর ও অভিভাবকদের রক্ষা করতে হবে। এটা নিয়ে আর পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ নেই,” বেনারকে জানান শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

প্রাথমিকে যত শিক্ষক–শিক্ষার্থী

দেশে মোট প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫৩৭টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৮৪জন। আর শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ কোটি ৯৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৯জন।

দেশে ১১ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, এক্সপেরিমেন্টাল স্কুল, ইবতেদায়ি মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও স্কুল, কমিউনিটি স্কুল, হাইস্কুল সংযুক্ত প্রাথমিক, ব্র্যাক স্কুল, শিশু কল্যাণ প্রাইমারি স্কুলসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়।

এ ছাড়া দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৯ হাজার ৬৮৪টি। শিক্ষক আছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৪ জন। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ জন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।