অধ্যাপক রেজাউল হত্যায় এক জেএমবি জঙ্গি গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.17
2016-05-17-Professor-Rezaul620.jpg অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে নিহতের স্বজনদের আশ্বাস দেন বাঁ থেকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। মে ১৪, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

চার মন্ত্রীর বিচারের আশ্বাস এবং একজন জঙ্গি সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কিছুদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন। তবে ২৭ মের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি না হলে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর বিচার দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করবেন তাঁরা।

“গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপলক্ষে ২০ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস বন্ধ থাকবে। ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে। ওই সময়ের মধ্যে আমরা গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যাশা করি,” বেনারকে জানান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ—আরএমপি দাবি করেছে, অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার সদস্য উপস্থিত ছিল।

বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ​র আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন এ কথা বলেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি।

গত ১৫ মে বগুড়া থেকে জেএমবির সদস্য মাসকাওয়াতকে (২৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত সোমবার বিকেলে রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই যুবকের বাড়িও বগুড়ায়। রংপুর পলিটেকনিক থেকে পাস করেছে মাসকাওয়াত।

“অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যার জন্য চারজন ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তিনজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়। আরেকজন মোটরসাইকেলে ছিল। অধ্যাপককে হত্যার পর দুজন মোটরসাইকেলে এবং দুজন অন্যভাবে পালিয়ে যায়,” মাসকাওয়াতের জবানবন্দির বরাত দিয়ে জানান পুলিশ কমিশনার।

কেন অধ্যাপককে হত্যা করা হয়েছে—এই প্রশ্নের জবাবে মাসকাওয়াত পুলিশকে বলেছে, কারণটা তাঁর জানা নেই। ওপরের নির্দেশ পেয়েই তাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বেনারকে জানান, এসব জঙ্গিগোষ্ঠী সরাসরি কারও নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটায় না। তাদের বেশ কয়েকটি স্তর থাকে। যে কারণে হত্যাকারীকে চেনা গেলেও নেপথ্যের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায় না।

গত ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার সামনে অধ্যাপক রেজাউলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন।

ওই হত্যার পর জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। তবে সরকার বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করে আসছে।

হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা গ্রেপ্তার

অধ্যাপক রেজাউলকে পর হত্যাকারীরা রাজশাহীর খরখড়ি এলাকায় আশ্রয় নেয়। পুলিশ ওই আশ্রয়দাতাদের তিনজনকে আটক করেছে। তবে ‘তদন্তের স্বার্থে’ তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। আরও পাওয়া গেছে একটি চাপাতি ও একটি ছোরা।

শিক্ষক আন্দোলন স্থগিত

ঘটনার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্নস্থানে হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মৌন মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। তবে অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যার বিচারে চার মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আজম শান্তনু ।

সম্প্রতি রাজশাহী গিয়ে চার মন্ত্রী হত্যার দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁরা হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আলাদাভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে ১৪ দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

“তাঁদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শিক্ষক সমিতি,” সংবাদ সম্মেলনে জানান অধ্যাপক শাহ্ আজম।

আবার আলোচনায় জেএমবি

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় ঘুরেফিরে আসছে জেএমবির নাম। গত তিন–চার বছর ধরে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম শোনা গেলেও জেএমবির কথা তেমন একটা শোনা যায়নি। র‍্যাব–পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা ধরা পড়ছে।

তবে জঙ্গি দমনে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে অনেকেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে আপস করছে বলেও অভিযোগ আছে।যদিও সরকার বলছে, জঙ্গি দমনে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে।

“সরকারের নজিরবিহীন নিষ্ক্রিয়তা দেশে জঙ্গিবাদকে পুনরায় সক্রিয় ও উৎসাহিত করছে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক খুনের ঘটনাগুলোকে শাসকগোষ্ঠী বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রচার করলেও ঘটনাগুলোর মধ্যে মতাদর্শীক যোগসাজশ আছে। এই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী মতাদর্শের অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে শাসকগোষ্ঠীর আপস ভীতিকর ও দুঃখজনক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।