বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল সৌদি আরব
2016.08.11
দীর্ঘ সাত বছর পর বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী ছাড়া অন্যান্য খাতে কর্মী নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি আরব। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এ বাজারটিতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক প্রবেশের সুযোগ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি তথ্য মতে, ৬০ হাজার নারী গৃহকর্মীসহ বর্তমানে সৌদিতে ১৩ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। এই হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।
তবে ওই দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা কিছুটা হলেও ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অন্যান্য দেশ যখন সৌদি আরব থেকে শ্রমিক ফেরত নিচ্ছে তখনই বাংলাদেশের জন্য ওই বাজার উন্মুক্ত করেছে দেশটি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, “গত সাত বছর ধরে গৃহশ্রমিক বাদে অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছিল সৌদি আরব। বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টায় ১০ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে দেশটি। ”
মন্ত্রণালয় বলছে, “নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এখন সকল খাতে দক্ষ, আধাদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের পাশাপাশি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নার্স ও শিক্ষকদের মত পেশাজীবীদেরও সৌদি আরবে কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হল।”
এ বছরের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গে বৈঠকে জনশক্তি রপ্তানির বাধা অপসারণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সৌদি বাজার উন্মুক্ত হওয়াকে বাংলাদেশের জন্য একটি দারুণ সুযোগ উল্লেখ করে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মোশি বেনারকে বলেন, “এটি বাংলাদেশের সব খাতের শ্রমিকদের জন্য সুসংবাদ। এ সিদ্ধান্ত দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।”
গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে সৌদি আরবে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্প–কারখানা। কয়েকটি কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে রাজি হয়েছে সৌদি সরকার।
বিশ্লেষকেরদের মতে, বাজার উন্মুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে সুখবর। বেতনের অভাবে অন্য দেশের কর্মীরা যখন নিজ দেশে ফিরছে, তখন স্বল্প বেতনের কর্মী নিতেই মূলত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক চাইছে দেশটি। এটা মন্দের ভালো হলেও এ সুযোগ কাজে লাগাতে স্বল্প অভিবাসন মূল্যে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ওয়ারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বেনারকে বলেন, “আমাদের শ্রমিকেরা সাধারণত কম বেতনে কাজ করে। ভারতসহ অন্য দেশগুলো যখন তাদের শ্রমিকদের ফেরত নিচ্ছে তখন সৌদি আরব সেসব স্থানে বাংলাদেশি কর্মীদের কথা ভেবেছে। এটা ইতিবাচক।”
তাঁর মতে, বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ অভিবাসন মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা ও সেখানে নিয়মিত কর্মীদের বেতন–ভাতা আদায় করা।
সাইফুল হক বলেন, “এমন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে শ্রমিক পাঠানোর আগে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বেতন, ভাতা, ওভারটাইমসহ সার্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”
তিনি বলেন, "দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা খরচ করে শ্রমিকেরা সৌদি আরব যায়। ফলে খরচের টাকা আয় করতে না পেরে বিপদে পড়ে অনেকেই"। তাই সর্বনিম্ন অভিবাসন মূল্যে অথবা বিনা খরচে শ্রমিকদের সৌদি পাঠানোর দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “সৌদির অর্থনৈতিক বাজার এখন একটু খারাপ যাচ্ছে। তবে আমাদের শ্রমিকেরা সাধারণত: জরুরি খাতে কাজ করে। এ কারণে তাদের গুরুত্ব থাকে সবসময়। তা ছাড়া আমাদের কর্মীরা স্বল্প বেতনেও কাজ করতেও আগ্রহী।”
তিনি বলেন, “২০০৯ সালের আগে প্রতিবছর এক লক্ষাধিক শ্রমিক সৌদিতে পাঠানো হত। সে হিসেবে আবারও দেশটিতে বছরে অন্তত এক লাখ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”
আগের মতোই রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে অভিবাসন মূল্য যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়ে নজরদারি করবে মন্ত্রণালয়।”
আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত
এদিকে সৌদি আরবে একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুন লেগে চার বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দেশটির হারাজ বিন কাশেম মানফুহা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা বলে নিহতদের পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নিহতরা হলেন, শামিউল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম হোসেন(৩৪), জামাল হোসেন মোল্লা (৪৫),অসীম (২৭) ও আমিরুল ইসলাম (৩৫)।
এ বিষয়ে খাজুরা ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, “নিহতরা সৌদির একটি সোফা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। কর্মরত অবস্থায় বুধবার বিকেলে এয়ারকুলার থেকে আগুন লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়।”