শিক্ষক শ্যামল কান্তি পুনর্বহাল,সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি
2016.05.19

সাংসদের হাতে লাঞ্ছিত নারায়ণগঞ্জের সেই শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে তাঁর স্বপদে বহাল করেছে সরকার। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁকে ‘অন্যায়ভাবে’ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।”
শ্যামল কান্তিকে প্রধান শিক্ষক পদে পুনরায় বহাল করে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষক নেতারা। তবে তাঁরা ওই ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছেন।
তবে নারায়ণগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সাংসদ সেলিম ওসমান বলেছেন, তিনি অনুতপ্ত নন। ক্ষমাও চাইবেন না।
গত শুক্রবার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করার কথিত অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে পেয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নেতৃত্বে কান ধরে উঠ-বস করানো হয়। এর আগে এলাকাবাসীর হাতে প্রহৃত হন ওই শিক্ষক।
পরে মঙ্গলবার তাঁকে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে শ্যামল কান্তির দাবি, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বিরোধ থেকেই পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে দোষীদের বিচার দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও বারবার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই শিক্ষকের পাশে দাঁড়ায় দেশের উচ্চ আদালতও। সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
‘অবৈধ’ আদেশ বাতিল
শিক্ষামন্ত্রী জানান, সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বুধবার রাতে হাতে পেয়ে তা পর্যালোচনার পর ওই শিক্ষককে নিজ পদে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ অবৈধ ও এজেন্ডা বহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বরখাস্তের আদেশ দিয়েছিল। ওই আদেশের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কমিটিও বাতিল করা হয়েছে। তিনি (শ্যামল কান্তি) নিজ পদে বহাল আছেন এবং দায়িত্ব পালন করে যাবেন।”
স্কুল পরিচালনার জন্য আপাতত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ক্ষমা চাইব না: সেলিম ওসমান
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাংসদ সেলিম ওসমান গতকালই বীর দর্পে জানান, ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইবেন না তিনি। উল্টো ওই ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন এই সাংসদ।
ওই শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন বলে দাবি করেন সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আল্লাহকে যদি কেউ কটাক্ষ করে, একজন মুসলমান হিসেবে আমি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব? যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য আছে। ক্ষমাটা কার কাছে চাইতে বলছেন আমাকে? শিক্ষকের কাছে? তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।”
আল্লাহকে কটাক্ষ করার অপরাধে এলাকার মানুষের রোষানল থেকে বাঁচতে সেদিন ওই শিক্ষক স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠবস করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর’ খবর প্রকাশ হওয়া তিনি সমাজের কাছে ছোট হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে ওই প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহালের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সেলিম ওসমান।
প্রতিবাদ অব্যাহত, অভিশংসনের প্রস্তাব
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ এবং ওই ঘটনার বিচার দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আয়োজিত মানববন্ধনে দোষী সেলিম ওসমানের বিচার দাবি করা হয়। একই দাবিতে এদিন দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়েও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন হয়।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, “প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমরা লজ্জিত। সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।”
প্রবীণ শিক্ষক নেতা এম এ বারী বেনারকে বলেন, “শিক্ষকের পদ ফিরিয়ে দিয়ে ঠিক কাজ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু ওই ঘটনা বাঙালির ললাটে যে লজ্জার তিলক এঁকে দিয়েছে, তা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা যাবে না।”