হত্যা মামলায় পলাতক সাংসদের মালামাল জব্দ
2016.05.20

চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় পালিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাসহ তার তিন ভাই। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের বাড়ির মালামাল জব্দ করতে।
গতকাল শুক্রবার পুলিশ চার ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তেমন মালামাল পাননি। তবে সরকারি দলের নেতা–কর্মীসহ অনেকের মনোভাব হচ্ছে, মালামাল না পেলেও বড় কথা হচ্ছে, প্রভাবশালী চার ভাইয়ের বাড়িতে পুলিশ হানা দিতে পেরেছে।
টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার আসামি ওই চার ভাই, যাঁরা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধি। এই চার ভাই ওই জেলায় খান পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করতেন।
পুলিশ বলছে, আগেই সবকিছু সরিয়ে ফেলায় তাদের বাড়িতে মালামাল বলতে সেই অর্থে কিছুই পাওয়া যায়নি।
তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে, কেউ যে আইনের উর্ধ্বে নন; এই সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ তারই প্রমাণ।
আর বিশ্লেষকরা বলছেন, ফারুক হত্যার মত যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রে আইনকে এভাবেই নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তবেই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
টাঙ্গাইলের স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, আদালতের আদেশ অনুযায়ী ফারুক হত্যা মামলায় হাজির হননি আমানুর। এ জন্য সাংসদ ও তাঁর তিন ভাইসহ পলাতক আসামিদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন টাঙ্গাইলের একটি আদালত।
নামমাত্র মালামাল জব্দ
শুক্রবার কলেজপাড়ায় অবস্থিত রানা ও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার বাসায় অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, আগে থেকেই মালামাল সরিয়ে ফেলায় সাংসদ রানার বাসা থেকে কেবলমাত্র একটি বাইসাইকেল ও একটি টেবিল জব্দ করা গেছে। মুক্তির বাসা থেকে কিছু কাপড়চোপড় এবং ফ্রিজ জব্দ করেছে পুলিশ।
টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি নাজমুল হক জানান, এরা ছাড়াও ওই মামলার অপর পাঁচ আসামির বাড়িতেও এদিন অভিযান চালানো হয়। সেসব বাড়িতেও কাপড়চোপড়, টেবিল ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
দলীয় প্রার্থী হতে চাওয়ায় খুন
তিন বছর আগে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিনদিনের মাথায় টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নাহার দাবি করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চাওয়ার কারণেই ফারুককে হত্যা করা হয়। এ হত্যার সঙ্গে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই রানা, মুক্তি, কাঁকন ও বাপ্পা জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।
তদন্ত শেষে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি গোলাম মাহফীজুর রহমান। এতে চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
এদের মধ্যে চারজন আটক ও বাকি ১০ জন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন; টাঙ্গাইলের ঘাটাইল আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা।
রানার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির হোসেন, যুবলীগের তৎকালীন নেতা আলমগীর হোসেন চাঁন, দারোয়ান বাবু ওরফে দাঁত ভাঙ্গা বাবু, ছানোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন নূর ও সাবেক কমিশনার মাসুদুর রহমানও পলাতক আছেন।
বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন আনিছুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, সমীর মিয়া ও ফরিদ আহমেদ।
গত ৬ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণের পর পলাতকদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
ওই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ফারুক আহমদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থিতা থেকে সরতে রাজি না হওয়ায় রানার সহযোগী কবির হোসেন পিস্তল দিয়ে তাকে গুলি করে। পরে রানার নির্দেশে আনিছুল, মোহাম্মদ আলী, আবদুল হক, সমীর ও কবীর ফারুকের লাশ নিয়ে তার নিজ বাসার সামনে ফেলে আসে।
কেউই আইনের উর্ধ্বে নন
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহুল আলম লেলিন বেনারকে বলেন, “আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রানার বিরুদ্ধে আদালতের এই আদেশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান প্রমাণ করে যে, কোন ব্যক্তিই আইনের উর্ধ্বে নন। এখানে কে, কোন দলের সেটা বড় কথা নয়। অপরাধী যেই হোক তাকেই শাস্তি পেতে হবে।”
তবে নির্দিষ্ট কিছু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে নয়, বরং দেশের সকল ঘটনার ক্ষেত্রেই আইনের শাসন একই গতিতে চলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, "সাংসদ রানা ও অন্যদের বিরুদ্ধে আদালতের ব্যবস্থা নেওয়াটা ইতিবাচক। আইন সবার জন্য সমান, সকল নাগরিকের সমান অধিকার। তবে সব মামলার ক্ষেত্রে আইনের এই ধারা বজায় রাখতে হবে।”