প্রায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে ঢাকা শহরের আয়তন

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.09
Dhaka-city-area620.jpg ঢাকা শহরের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মার্চ ৩০, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ঢাকা শহরের আশপাশে থাকা গ্রামগুলোকে দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে ঢাকা মহানগরের বিদ্যমান আয়তন প্রায় দ্বিগুণ হবে।

প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। এসময় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে আটটি করে ইউনিয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

“জনস্বার্থে ঢাকা মহানগরের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে,” সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকা মহানগরের মোট জনসংখ্যা হবে প্রায় এক কোটি ৮২ লাখ। আর ঢাকা মহানগরের আয়তন বেড়ে হবে প্রায় ২৭০ বর্গকিলোমিটার, যা বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ও জনসংখ্যা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তুলনায় বেশিই থাকছে।এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

“আগে থেকেই দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ও লোকসংখ্যা কম ছিল। নতুন করে সীমানা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও উত্তর সিটির তুলনায় দক্ষিণের আয়তন কম বেড়েছে। এটা অগ্রহণযোগ্য,” বেনারকে জানান সাঈদ খোকন।

এই ১৬টি ইউনিয়ন সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিল। এসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা নগরের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও কাগজে-কলমে গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতেন। তবে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই সব ইউনিয়নে যাতে ভোট না হয়, সেই প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

“শহুরে আবহের ভেতর গ্রামীণ চরিত্র থাকাটা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।এটা আরও আগেই শহরের মধ্যে নেওয়া উচিত ছিল। ইউনিয়নগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নেওয়াটা ভালো হয়েছে,” বেনারকে জানান নগর গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

এসব গ্রাম শহরের আওতায় আসায় দুই সিটি কর্পোরেশনের আয় বাড়বে, অন্যদিকে নাগরিক সেবা দিতে গিয়ে কর্পোরেশনের ব্যয়ও বাড়বে।

“ঢাকার আশপাশে ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে এই বিশাল এলাকা থাকায় সেখানে ১০ তলা ভবন হচ্ছে বা পরিকল্পনাহীন আবাসন হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিয়ে।সেখানকার নাগরিকদের অনেকে শহরের সুবিধা পেলেও কর দিচ্ছেন না বা খুব কম কর দিচ্ছেন,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এখন তাঁদের কর দিতে হবে। আবার সিটি কর্পোরেশনকেও সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এখনকার আয়তন ৮২ দশমিক ৬৩৮ বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে আটটি ইউনিয়ন যুক্ত হলে উত্তর সিটির মোট আয়তন হবে ১৬০ দশমিক ৭৬৮ বর্গকিলোমিটার। নতুন যুক্ত হওয়া এই আটটি ইউনিয়নের আয়তন ৭৮ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার।

এগুলো হচ্ছে বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি (খিলক্ষেত।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান আয়তন ৪৫ বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে আটটি ইউনিয়ন যুক্ত হলে মোট আয়তন হবে ১০৯ দশমিক ১৯ বর্গকিলোমিটার। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া আটটি ইউনিয়নের আয়তন ৬৪ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার।

এসব ইউনিয়ন হচ্ছে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নতুন আটটি ইউনিয়ন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হলে মোট জনসংখ্যা হবে ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ১৭। অন্যদিকে সমানসংখ্যক ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ার পর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংখ্যা হবে ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৫ জন।

রাজধানীর সীমানা নির্ধারণ হয়নি

সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঢাকার সীমানা আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে। তবে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও এমন কোনো আইন হয়নি। ফলে নির্ধারণ করা যায়নি রাজধানীর সীমানাও।

একেক সংস্থা একেকভাবে এর সীমানা ধরে নিচ্ছে। এতে রাজধানীকে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “স্বাধীনতার এত বছর পর রাজধানী ঢাকার সংজ্ঞা নির্ধারণ না হওয়াটা দুঃখজনক। ঢাকার কতটুকু আসলে রাজধানী, তার জবাব কারও জানা নেই। সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও এ-সংক্রান্ত কোনো আইন করা হয়নি।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।