ইউপি নির্বাচনে প্রাণহাণির রেকর্ড;নিহত ১০১, আহত সহস্রাধিক

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.05.26
2016-05-26-ৈৈৈৈৈৈৈৈৈ620.jpg ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানির তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন। মে ২৬, ২০১৬।
বেনার নিউজ

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতায় প্রাণহানি এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে এখন পর্যন্ত ১০১ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।

নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রাণহানির জন্য নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা ও সরকারের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে নির্বাচন কমিশন এখনই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।

সবচেয়ে মন্দ ও দুঃস্বপ্নের নির্বাচন

সুজনের দাবি, গত ২৮ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ দিয়েছেন। প্রথমবারের মত দলীয়ভাবে হওয়া ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ দফা শেষে এখন পর্যন্ত ১০১ জন নিহত হয়েছেন, আহতের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে।

এবারের নির্বাচনে সহিংসতায় নিহতের পাশাপাশি প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ারও রেকর্ড হয়েছে।

এসব সংখ্যা হিসেব করেই এবারের নির্বাচনকে সবচেয়ে ‘মন্দ’ এবং ‘দুঃস্বপ্নের’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে সুজন।

লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, “সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী অনিয়ম ও নেতিবাচক অনুষঙ্গের দৃশ্যমানতার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে মন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।”

অতীতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোর সহিংসতার অনুসন্ধান করে সুজন জানায়, ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩ ও ১৯৯২ সালের নির্বাচনগুলোতে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।

তবে ১৯৮৮ সালে মারা যায় ৮০ জন। এতোদিন সেটাই ছিল সর্বোচ্চ। এ বছর সে রেকর্ড ছাড়ালো। এছাড়া ১৯৯৭ সালে ৩১ জন, ২০০৩ সালে ২৩ জন এবং ২০১১ সালে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সুজন বলছে, এ বছর নিহতদের মধ্যে নির্বাচনপূর্ব সংঘর্ষে মারা গেছে ৪৫ জন। আর ৩৬ জন ভোটের দিনের সংঘর্ষে এবং ২০ জন মারা যায় ভোট পরবর্তী সংঘর্ষে।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সুজন জানায়, এবারের নির্বাচনে চার দফায় আওয়ামী লীগের ২১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ৫৫৪ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি।

চলমান ইউপি নির্বাচনকে ‘এক দুঃস্বপ্ন’ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এটা মোটেও গণতান্ত্রিক নয়। নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, অনিয়ম, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় এই নির্বাচন যেন সবার কাছে গা সওয়া হয়ে গেছে। এর অর্থ এসব এখন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়।”

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬ শুরু হয়, যা আগামী ২৮ মে পঞ্চম ও ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নিহতের সংখ্যা জানে না ইসি

এদিকে সুজনের দাবির বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি নির্বাচন কমিশন।এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বেনারকে বলেন, “সুজন বক্তব্য দিয়েছে, এখানে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। কোথায় কি হয়েছে জানি না। কেউ বলবে, আর আমরা স্বীকার করে নেব, এটা হতে পারে না। আমরা দেখার পর এ বিষয়ে কথা বলব।”

দলীয় নির্বাচন আর ইসির ব্যর্থতা

দলীয় নির্বাচন, মনোনয়ন বাণিজ্য, ইসির ব্যর্থতা ও ইসিকে সরকারের অসহযোগিতার ফলে সহিংসতা বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলিম বেনারকে বলেন, “এবারের ইউপি নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিনশনের দুর্বলতা ছিল। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারও কমিশনকে সেভাবে সহযোগিতা করছে না।”

দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়াকেও সহিংসতার অন্যতম কারণ চিহ্নিত করে এই পর্যবেক্ষক বলেন, “কোনোরকম আলাপ–আলোচনা ছাড়াই দলীয়ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি।”

তাঁর মতে, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পার পাওয়া যাচ্ছে বলেই সহিংসতা বাড়ছে। এই সহিংসতা কমাতে না পারলে আগামী নির্বাচন বন্ধ করা উচিত।

আবদুল আলিম বলেন, “নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এখানে সহিংসতা কাম্য নয়। নির্বাচনে সহিংসতা হলে, তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। আর অভিশপ্ত নির্বাচন আমরা চাই না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।