সড়ক দুর্ঘটনা: এক মাসে নিহত ৪৮০’র বেশি মানুষ

পুলক ঘটক
2021.02.26
ঢাকা
সড়ক দুর্ঘটনা: এক মাসে নিহত ৪৮০’র বেশি মানুষ বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ৪ আগস্ট ২০১৮।
[রয়টার্স]

করোনা মহামারির সময় তুলনামূলক সড়ক দুর্ঘটনা কম থাকলেও জীবনযাত্রা যত স্বাভাবিক হচ্ছে, সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যাও তত বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম মাসেই সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৮০ জনের বেশি মানুষ।

সর্বশেষ শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় এক দিনেই মারা গেছেন অন্তত ১৭ জন। 

পৃথক ছয়টি সড়ক দুর্ঘটনায় শুক্রবার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে সিলেটে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেছেন আটজন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফউল্লাহ তাহের বেনারকে বলেছেন, “দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ১৮ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মারা যাওয়ায় এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা আটজন।”

শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে সিলেট শহরতলির রশিদপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

বগুড়ার শাজাহানপুরের মাঝিড়া এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন জেলার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বজলুর রশিদ। 

এ ছাড়াও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় ট্রাকচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বাস চাপায় একজন টমটমচালক, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান উল্টে একজন এবং ফরিদপুরে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে একজন ভ্যানযাত্রী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি কর্মকর্তারা। 

“সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি না থাকার কারণেই এত দুর্ঘটনা ঘটছে,” বলে মনে করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। 

“প্রতিদিন সড়কে এরকম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না,” মন্তব্য করে তিনি বেনারকে বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনা করে গোটা পরিবহন খাত ঢেলে সাজানো এখন জরুরি।” 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারিতে সারা দেশে ৪২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৮৪ জন, আহত হয়েছেন আরো ৬৭৩। এছাড়া ওই সময়ে চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় সাত জন এবং ১১টি রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪ জন। 

আন্দোলনের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকায় দুই শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও আইনটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখনো কার্যকর হয়নি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে নতুন আইনের প্রয়োগ শুরু হলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।

এর ফলে সরকার সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে আইনটি প্রয়োগের সময়সীমা ২০২০ সালের শেষ দিন পর্যন্ত বর্ধিত করে। তবে এখন পর্যন্ত তা সংশোধন হয়নি।

“আইনটি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে শ্রমিকেরা বলছেন, তাঁরা পুরোনো আইন অনুযায়ী চলছেন,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তাঁর মতে, “গণ আন্দোলনের পর সড়ক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু কমেছে—এমনটি দাবি করার সুযোগ নেই। করোনা পরিস্থিতির কারণে যাত্রী পরিবহন দুই মাস বন্ধ ছিল। এখনো সীমিত পরিসরে চলছে। এটা বিবেচনায় নিলে সড়ক দুর্ঘটনা বরং বেড়েছে।”

“সরকার আন্তরিক হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। যেসব প্রতিষ্ঠান সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজে জড়িত তাদের আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে,” বলেন তিনি। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে অর্ধেকের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ঘটে এক তৃতীয়াংশের বেশি দুর্ঘটনা। 

গত ৬ জানুয়ারি প্রকাশিত নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর দেশে চার হাজার ৯২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে মারা গেছেন চার হাজার ৯৬৯ জন, আহতের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। 

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

এদিকে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক নিরাপত্তায় সড়ক পরিবহন বিভাগে গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত সুপারিশমালা যাচাই-বাছাই করে কর্মকৌশল নির্ধারণে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে গত সপ্তায় গণমাধ্যমে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।