ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য গাড়ি নিলামের আদেশ দেয়া হবে: হাই কোর্ট
2019.04.04
ঢাকা

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়ের ভেতরে ক্ষতিপূরণ না দিলে দায়ী কোম্পানির বাস নিলামে তুলে টাকা আদায়ের আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেবার বিষয়ে আদালত আদেশ দিলেও বাস নিলামে তুলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে এই প্রথম।
এ প্রসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত রাসেল সরকারের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক বেনারকে বলেন, “অতীতের বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়িমসি করেছে। আপিলের মাধ্যমে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন দীর্ঘকাল ঝুলিয়ে রাখার নজির আছে। এবারই প্রথম হাই কোর্ট থেকে একটি পরিবহন কোম্পানির সকল বাস জব্দ করে নিলামে তোলার মতো কঠোর হুশিয়ারি প্রদান এবং টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার মতো আদেশ এসেছে।”
আদালতের এই আদেশকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বেনারকে বলেছেন, “সবার জন্য এই আদেশ একটি কঠোর বার্তা হিসেবে কাজ করবে।”
অন্যদিকে “আদালতের এই আদেশ পরিবহণ খাতের অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করছেন রাসেল সরকারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদনকারী উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল একটি প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চালক রাসেল সরকার কেরানীগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। রাসেল মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের ধোলাইপাড় প্রান্তে পৌঁছলে গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাস পেছন থেকে তাঁর মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়।
এতে রাসেল মাইক্রোবাস থেকে নেমে বাসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করলে বাসের চালক কবির মিয়ার সাথে তাঁর কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কবির গাড়ি চালিয়ে দিলে রাসেলের পায়ের ওপর দিয়ে বাস চলে যায়। পরে তাঁর একটি পা কেটে ফেলতে হয়।
এ ঘটনায় রাসেলের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় গত বছরের ২৮ এপ্রিল মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারধীন রয়েছে।
এদিকে গত বছরের ২৯ মে রাসেলের পক্ষে ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ পা হারানো রাসেলকে বুধবারের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। টাকা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছিল।
এ আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে তা নাকচ করে দেয় আদালত।
বৃহস্পতিবার স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে আদালতে আসেন রাসেল সরকার।
শুনানিতে রাসেলের আইনজীবী খন্দকার শামসুল “গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি,” বলে আদালতকে জানান। অন্যদিকে গ্রিন লাইনের মালিক দেশের বাইরে আছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ।
এর প্রেক্ষিতে বিচারকরা গ্রিনলাইনের ম্যানেজারকে দুপুর দুইটার মধ্যে হাজির করতে নির্দেশ দিয়ে শুনানি মুলতবি রাখেন। দুপুর ২টার পর পুনরায় শুনানি শুরু হলে গ্রিন লাইনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার জানান, বাসের মালিক মো. আলাউদ্দিন চিকিৎসার জন্য গত ৩১ মার্চ ভারতে গিয়েছেন। তিনি ৯ এপ্রিল দেশে ফিরবেন।
গ্রিন লাইনের মালিক ৯ তারিখ দেশে ফিরলে ১০ তারিখ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে হলফনামা জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১০ এপ্রিলের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে গ্রিন লাইনের সকল বাস জব্দ করে নিলামে তুলে টাকা আদায় করার আদেশ দেওয়া হবে বলে জানায় আদালত। টাকা দিতে না পারলে ১১ এপ্রিলের জন্য কোনো টিকেট বিক্রি না করার আগাম নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
আদালতের এই আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে রাসেল বেনারকে বলেন, “মনে হচ্ছে এখনো বিচার আছে। আমি সুবিচার পাব।”