টানা পাঁচ ঘন্টার বেশি গাড়ি চালানো যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
2018.06.25
ঢাকা
ঈদ-উল-ফিতরের আগে পরে সড়কে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মর্মান্তিক এসব দুর্ঘটনা কমাতে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পরিবহন শ্রমিকদের কায়িক শ্রম কমানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দূরপাল্লার গাড়ির ড্রাইভারেরা একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে পারবেন না। প্রতিটি দূরপাল্লার গাড়িতে একজন বিকল্প ড্রাইভার থাকবে।
মন্ত্রিসভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করতে বলেছেন।
পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরুর আগে ১১ জুন থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪০ জন যাত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন অথবা ঈদ উদ্যাপন করে কর্মস্থলে ফিরে আসছিলেন। সর্বশেষ রোববার ১২ জেলায় ৩৯ জন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
সোমবার টাঙ্গাইল জেলায় পাঁচজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা গাইবান্ধা থেকে কর্মস্থল হবিগঞ্জ যাচ্ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ছয়টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে; বাস-ট্রাকের চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও রাস্তার পাশে তাঁদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করা। এসব বিশ্রামাগারে শ্রমিকেরা বিশ্রাম নিতে পারবেন এবং সেখানে তাঁদের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূরপাল্লার একজন চালক কোনোক্রমেই পাঁচ ঘণ্টার বেশি একটানা গাড়ি চালাতে পারবেন না; বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, যাত্রীদের অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে; সড়ক পথের সিগন্যাল শতভাগ মেনে চলতে হবে। সবাই যাতে সিগন্যাল মেনে চলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক গাড়িতে চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধতে হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বেনারকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেই গাড়ির ড্রাইভারকে দায়ী করা হয়। দেখা হয় না যে দুর্ঘটনার মূল কারণ কী।
তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি কার্যকর পদক্ষেপের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাঁর মতে কয়েক বছর আগে বিসিআইসি সচিবের দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কারণ ছিল সিট বেল্ট না বাঁধা। সিটবেল্ট বেঁধে রাখার কারণে ওই গাড়ির ড্রাইভার ও আরকজন বেঁচে যান। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা-আরিচা হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ডিজাইন।
কিন্তু কারণ না জেনেই ঘটনার পর সবাই ড্রাইভারদের শাস্তি বাড়ানোর কথা বলতে থাকেন। ড্রাইভার অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু তাঁদের সমস্যা সমাধানের কথা না বলে শাস্তির কথা বলা ঠিক নয়।
শাজাহান খান বলেন, বাংলাদেশে একজন সড়ক পরিবহন শ্রমিক গড়ে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেন। দিনের পর দিন একজন শ্রমিকের পক্ষে এভাবে কাজ করা অসম্ভব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ছয় দফা বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
শাজাহান খান বলেন, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের জনবল কম থাকায় সড়কের আইন সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে কি না তা মনিটর করতে পারছে না। তিনি বলেন, ঈদের আগে তিন দিন ও ঈদের পরে তিন দিন হাইওয়ে মনিটর করেছে বিআরটিএ।
বিআরটিএ মনিটরিং বন্ধ হওয়ার পর থেকেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে বলে তিনি মত দেন।
শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের শ্রমিক মো. সুমন বেনারকে বলেন, “আমাদের যাত্রীরা মানুষ মনে করে না। যানজট ঠেলে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ছাড়া একজন শ্রমিক কীভাবে ডিউটি করে তা আপনারা বুঝবেন না। সত্যিই যদি একজন ড্রাইভারকে পাঁচ ঘণ্টা পর রেস্ট দেওয়া হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে।"
“তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গেলে মালিক পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। মালিকেরা যদি বিকল্প ড্রাইভার না রাখেন তাহলে আমাদের কোনো লাভ হবে না,” জানান সুমন।