ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেই বাসচাপায় নিহত মোটরসাইকেল আরোহী

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.08.03
ঢাকা
180803_Student_movement_1000.JPG ঢাকার মগবাজারে চাপা দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়। ৩ আগস্ট ২০১৮।
বেনারনিউজ

ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপি চলমান ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেই শুক্রবার মগবাজারে বাস চাপায় প্রাণ গেলো এক মোটরসাইকেল আরোহীর।

নিহত সাইফুল ইসলাম রানা (৩০) মগবাজারে অবস্থিত ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের নার্স ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বেলা দেড়টার দিকে সংঘটিত ওই দুর্ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

দুর্ঘটনার খবরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শুক্রবার ছুটির দিনেও এয়ারপোর্ট রোড, মিরপুর, ধানমন্ডি ২৭, আসাদগেট, জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকেরা সমাবেশ করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেছেন, চলমান আন্দোলনে জামায়াত-শিবির ঢুকে সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যারা সহিংস কাজে ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।

শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলা শহরে কোনো দূরপাল্লার বাস চলেনি। ফলে ঢাকা ছিল অবরুদ্ধ নগরী।

দেশের অন্যান্য জেলার সাথে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় ঢাকার বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

মগবাজারের দুর্ঘটনা

মগবাজার ওয়ারলেস মোড়ে সাইফুল ইসলাম রানার মৃত্যুর খবর বেনারকে নিশ্চিত করেন রমনা বিভাগের পুলিশ উপ-কমিশনার মারুফ হাসান সরদার।

তিনি বলেন, বাস চালক ইমরান সরদারকে (২৫) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আক্কাস সরদার বেনারকে বলেন, বেলা দেড়টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে মোটরসাইকেলটিকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটে চলাচলকারি এসপি গোল্ডেন লাইনের একটি বাস। এরপর রানাকে চাপা দেয় বাসটি।

এসপি গোল্ডেন লাইন বাসটি এক বাস টার্মিনাল থেকে অন্য টার্মিনালে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে শ্রমিকেরা।

আশেপাশের জনতা এরপর বাসটিকে আটকে ফেলে ও ভাঙচুর করে। পরে বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

বাসের চালক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাকে বেধড়ক গণপিটুনির পর পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

২৯ জুলাই রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান ছাত্র আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে ঢাকায় বাস চলাচল করেনি। গাবতলি, সায়েদাবাদ, মহাখালী কোনো টার্মিনাল থেকেই বাস ছাড়েনি।

মিরপুর সাড়ে এগারো ও বারো এলাকায় কিছু শ্রমিকদের রাস্তায় অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে তারা কোনো ভাঙচুর করেনি।

কেউ কেউ বাস চালাতে চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়।

ঢাকার বাইরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, ও অন্যান্য জেলাগুলোতে বাস চলেনি বলে খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার বিকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, তারাও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন সমর্থন করেন।

তিনি জানান, “সড়কে আমাদের নিরাপত্তা না থাকার কারণে আমরা যানবাহন চালাতে পারছি না।"

এনায়েত উল্যাহ জানান, গত ছয় দিনে চার শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা যখন সড়কে নিরাপদ বোধ করব তখন গাড়ি নামাব। এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনও কর্মসূচি নয়।”

গত কয়েকদিনের বিঘ্নিত যান চলাচলের কারণে ঢাকার বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মাছ ও কাঁচামালের সরবরাহ কমতির দিকে।

মিরপুর ছয় নম্বরে বাজার করছিলেন সাইফুল হুদা। তিনি বেনারকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কথা বলে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সব পণ্যের দাম।

তিনি বলেন, “যে রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি ছিল সেই মাছ আজ ৪৫০ টাকা। গত সপ্তাহে বেগুন ছিল ৪০ টাকা। এখন এর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। জানি না কতদিন চলবে এই দাম।”

দুয়ারিপাড়ার সব্জি বিক্রেতা মো. ইয়াসিন বেনারকে বলেন, “বাজারে মাল নাই। মাল না থাকলে দাম বাড়বেই। এটা আবার ঠিক হয়ে যাবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবে। তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতারা ঢুকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে ছাত্রদের।

মন্ত্রী বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়েছে। তাই তাদের উচিত লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা।

তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা আছে। যদি নৈরাজ্যকর অবস্থা চলে তাহলে শনিবার থেকে যারা আমাদের কোমলমতি শিশুদের সহিংসতার পথে ঠেলে দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মন্ত্রী বলেন, “আমি অভিভাবকদের বলব, আপনারা নিজ নিজ বাচ্চাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তাদের ব্যবহৃত হতে দেবেন না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।