গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ইডেনের ছাত্রীসহ আটক ৩

প্রাপ্তি রহমান
2018.08.15
ঢাকা
180815_Police_arrested_1000.jpg নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ৫ আগস্ট ২০১৮।
বেনারনিউজ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানোর দায়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে ইডেন মহিলা কলেজের একজন ছাত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। গ্রেপ্তার ওই শিক্ষার্থীর নাম লুৎফুন নাহার লুমা।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল লুমাকে তুলে নিয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিবারকে জানিয়েছে, লুমার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা রয়েছে। তাঁরা পরোয়ানা নিয়ে এসেছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বুধবার গ্রেপ্তার করেছে আরও দুজনকে।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তুলে নিয়ে যায়। পাঁচঘণ্টা আটক রাখার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী ছিল সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর শুরু হওয়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৫১টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৯৭ জন।

লুৎফুন নাহার লুমাসহ বুধবার পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ জন। পুলিশ বলেছে, ফেসবুকে যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবে।

লুমা যেভাবে গ্রেপ্তার

লুমার বোন কেয়া সরকার বেনারকে বলেন, ভোর রাতের দিকে পুলিশ তাঁদের সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খিদ্রচাপড়ির বাসায় আসে। তাঁদের বাবা আগেই মারা গেছেন। মায়ের সঙ্গে তাঁরা তিনবোন পৈত্রিক ওই বাড়িতে থাকেন। কী কারণে অভিযান তাঁরা প্রথমে বুঝতে পারেননি।

“বাসায় পুলিশ এসেছে শুনে এলাকার লোকজন, সাংবাদিক সব আমাদের বাসায় ভিড় করে। সবাই জানতে চাইছিল ওকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পরে পুলিশ জানায় রমনা থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ওর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে,” কেয়া বলেন।

তবে বোনের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ সে সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত নন বলে জানান। তাঁর দাবি স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছে, তখন তাঁর বোন ঢাকায় ছিলেন না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তাঁকে ফাঁসানো হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রাজ্জাক নিশ্চিত করেছেন, লুমাকে গ্রেপ্তারে কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও বেলকুচি থানা যৌথ অভিযান চালায়। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময়ও তিনি অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মো. আবদুর রাজ্জাক।

গুজব ছড়ানোর দায়ে দুজন গ্রেপ্তার

বুধবার দুপুরের দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ গুজব ছড়ানোর দায়ে আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা প্রকাশ করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; আহমাদ হোসাইন (১৯) ও নাজমুস সাকিব (২৪)।

পল্টন থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সিআইডি বলছে, তারা গত ৪ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যালোচনা করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল যারা তাদের সিআইডি আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, এর অংশ হিসেবে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“আমরা অনুরোধ করব রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন ভিডিও বা পোস্টে লাইক, শেয়ার, কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন,” মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন।

সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে পুলিশ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল ছাত্রদের আন্দোলনের পর গত সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

“শান্তির দেশে অশান্তি সৃষ্টির কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না। যারা গুজব ছড়িয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, চলবে,” জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন।

তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের পাশাপাশি হেলমেট পরে দেশীয় অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে যারা তৎপর ছিল তারা কারা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখে তাদের চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগ আছে কি না সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন তিনি। তিনি বলেন, গুজব প্রতিহত করতে পুলিশ সদরদপ্তরে একটি সেল খোলা হয়েছে।

“সাইবার স্পেসে গুজব ছড়ানো বন্ধে পুলিশ সদরদপ্তরে একটি বিশেষ সেল খোলা হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমন ইউনিট, সিআইডি, পিবিআইতে যারা অপরাধ দমনের কাজ করে থাকেন তাঁদের সবাইকে নিয়ে শক্তিশালী সেল গঠন করা হবে,” জাবেদ পাটোয়ারী বলেন। তিনি আরও জানান, দেশের ৬৪টি জেলায় মনিটরিং সেল গঠনের কাজ চলছে।

গ্রেপ্তারে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সরকার সহিংসপন্থায় দমনের চেষ্টা করেছে। এ কাজে তাদের সহযোগী ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকেরা। এর সমালোচনা যারা করেছেন তাদেরকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসরণ করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর প্রধান শিকার ছাত্র ও সাংবাদিকরা। এভাবে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষের বাক স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।