এক পরিবারের চারজন এসিডদগ্ধ, সন্দেহ গৃহকর্তাকে ঘিরে
2016.04.07
রাজধানী ঢাকার রূপনগরের একটি বাসায় একই পরিবারের চারজন অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। তবে এই ঘটনায় ওই পরিবারের গৃহকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে, তৃতীয় স্ত্রীকে এসিডদগ্ধ করার ঘটনায় তাঁর স্বামী সুরুজ আলম খান জড়িত। ওই স্বামীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দগ্ধ চারজন হলেন মাহফুজা আক্তার ওরফে সুবর্ণা (২৮), তাঁর নয় বছরের মেয়ে সানজিদা সুলতানা, স্বামী সুরুজ আলম খান ও সুরুজের দ্বিতীয় স্ত্রী নিলুফার বেগম (৩৫)। এসময় প্রথম স্ত্রী আরেক কক্ষে ছিলেন।
আহত মাহফুজাকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, অ্যাসিডে মাহফুজার দুটি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যরা আহত হলেও আশঙ্কামুক্ত।
“মাহফুজা দেখতে পাবেন কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে,” বেনারকে জানান বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল।
তিনি বলেন, মাহফুজার মুখসহ শরীরের সাত শতাংশ পুড়েছে। তার মেয়ে সানজিদার হাতের কিছু অংশ পুড়লেও জীবনাশঙ্কা নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে দুই দুর্বৃত্ত আত্মীয় পরিচয়ে বাসায় ঢুকে মাহফুজা ও তার মেয়ে সানজিদাকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে।পুলিশের সন্দেহ, এর নেপথ্যে সুরুজ আলমের হাত রয়েছে।
সুরুজের বর্ণনা হচ্ছে, ভোর পাঁচটার দিতে রূপনগর ১৩ নম্বর সড়কের টিনশেড কলোনির বাসার সামনে তিনি দাঁত ব্রাশ করছিলেন। এ সময় দুই ব্যক্তি একটি মিষ্টির প্যাকেট হাতে সেখানে হাজির হন।
ওই দুই ব্যক্তি নিজেদের তাঁর স্ত্রী মাহফুজার আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। এরপর সুরুজ তাঁদের বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু মাহফুজা জানান, ওই দুজনকে তিনি চেনেন না।
আকস্মিক দুর্বৃত্তরা বোতল থেকে মাহফুজার দিকে এসিড ছুড়ে মারে। এতে তাঁর মেয়ে সানজিদাও দগ্ধ হয়। মাহফুজাকে রক্ষা করতে গিয়ে নিলুফার দগ্ধ হন। নিলুফার সুরুজের দ্বিতীয় স্ত্রী।
পুলিশ ও দগ্ধদের পারিবারিক সূত্র বলেছে, হামলাকারীদের একজন মুখোশ পরা ছিল।তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পালিয়ে যায়। পরে দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মাহফুজার স্বামী সুরুজের দাবি, তৃতীয় স্ত্রী মাহফুজা ও মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি ও নিলুফার সামান্য দগ্ধ হন।
তবে পুলিশ বলছে, সুরুজের দগ্ধ হওয়াটাও সন্দেহজনক।এত ভোরে দাঁত ব্রাশ করতে তাঁর বাইরে বের হওয়ার যুক্তি নেই। তা ছাড়া তৃতীয় স্ত্রীর ওপর আগে থেকে তার ক্ষোভ রয়েছে। এ জন্য সুরুজকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“সুরুজ দুর্বৃত্তদের আটক করার চেষ্টা কিংবা চিৎকার করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, সুরুজের সঙ্গে তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর সাংসারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে ভাড়া করা লোক দিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে,” বেনারকে জানান পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান।
“শুরু থেকেই স্বামীর সঙ্গে আমার ঝামেলা ছিল। এখন আমার কী হবে? আমার মেয়েটার কি হবে? আমাদের দেখার কেউ নেই,” সাংবাদিকদের জানান বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মাহফুজা।
পুলিশ জানায়, সুরুজ মিল্ক ভিটায় চাকরি করেন। এর পাশাপাশি দাঁতের মাজন তৈরি করে বিক্রি করেন।তাঁর তিন স্ত্রীর সবাই চাকরি করেন।তিনজনেরই একটি করে মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই একই বাসায় থাকতেন। তবে তিন স্ত্রীর একে অপরের মধ্যে মিল রয়েছে।
“ঝগড়াঝাঁটির জের ধরে সুরুজ মাহফুজাকে প্রায়ই মারধর করতেন।মাহফুজাকে চাকরি ছাড়তে বলতের সুরুজ। তাদের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদের আয়োজন চলছিল,” জানান রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির।