নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক

জেসমিন পাপড়ি
2018.03.15
ঢাকা
নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ঢাকায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন। নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ঢাকায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন। ১৫ মার্চ ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে বাংলাদেশ।

এদিন সকাল থেকে সারা দেশে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে এবং বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

এ ছাড়া শুক্রবার দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার তিন দিনেও নিহতদের পরিচয় শনাক্ত এমনকি লাশ দেখারও সুযোগ পায়নি স্বজনেরা। তবে ইতিমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত একজনকে দেশে ও অপর একজনকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে ফেরার পর আহত শাহরিন আহমেদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে উড়োজাহাজের চার ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশি।

ওই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সিঙ্গাপুর সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসে বুধবার এক জরুরি বৈঠকে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা থেকে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় পারদর্শী সাত সদস্যের একটি চিকিৎসক দল বৃহস্পতিবার নেপালে গেছেন।

ঢাকা মেডিকেলে শাহরীন, রিজওয়ানুল সিঙ্গাপুরে

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নেপালে চিকিৎসাধীন ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জনকে ছাড়পত্র দিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকেরা। আহত দুজন এখনো আইসিইউতে এবং একজনকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আরও একজনকে তাঁর পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে নিয়ে যেতে চাইলেও এখনো তার ছাড়পত্র মেলেনি।

ছাড়পত্র পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে আহত শাহরিন আহমেদকে দেশে আনার পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

মেডিকেলে নেওয়া পরে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি বলেন, “নেপালের হাসপাতাল থেকে পাওয়া কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে শাহরিনের শরীরের ৫ শতাংশ পুড়েছে গেছে। তবে তা ডিপ বার্ন।”

“কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা তাঁর ড্রেসিং করব। এরপরেই মূলত শাহরিনের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে পারব। তাঁর পায়ের আঙুলে ফ্র্যাকচারের হয়েছে। সব দেখেশুনে চিকিৎসা শুরু করা হবে,” বলেন তিনি।

ডা. সামন্তলাল বেনারকে বলেন, “এত বড় একটা দুর্ঘটনার পরে স্বাভাবিকভাবেই শাহরিন আহমেদ মেন্টাল ট্রমায় রয়েছেন। তাই আমরা তাঁকে খুব বেশি বিরক্ত করতে চাই না।”

নেপালে চিকিৎসাধীন বাকি বাংলাদেশি রোগীদের সম্পর্কে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল হক জানান, “নেপালে আমাদের যে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল গেছেন তাঁরা রোগীদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানাবেন। সে অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় আরও ব্যবস্থা নেব।”

এর আগে বুধবার কাঠমান্ডুর ওম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি রিজওয়ানুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেছেন তাঁর পরিবার। ইউএস বাংলার কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাতেই তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে বলে বেনারকে জানান বেসরকারি এই বিমান সংস্থাটির জিএম (মিডিয়া) কামরুল ইসলাম।

রেজওয়ানুলকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা নিজাম উদ দৌলা।

চিকিৎসকদের অনাপত্তিপত্র পাওয়া অন্য বাংলাদেশিরা হলেন- ইয়াকুব আলী, মেহেদি হাসান, এমরানা কবির হাসি, সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও আলমুন নাহার অ্যানি।

নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস টেলিফেোনে বেনারকে জানান, “আহত ইয়াকুব আলী ও এমরানা কবির হাসিকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া বাকিদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঠানো হবে।”

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নিহত ৫১ জনের মধ্যে ২৫ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান মাশফি বিনতে শামস।

দুর্ঘটনার কারণ জানা সময়সাপেক্ষ

এদিকে নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্তে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এটা সময়ের ব্যাপার।”

তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স কানাডায় পাঠানো হবে, ইকুপমেন্টগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়ও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ছয় মাস, এক বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।”

“যদিও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী ৩৬৫ দিনের মধ্যে এ ধরনের তদন্ত শেষ করতে হয়। তবে প্রয়োজনে আরও বেশি সময় নেওয়া যেতে পারে,” বলেন নাইম হাসান।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত নেপাল করলেও বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বলেও জানান সিভিল অ্যাভিয়েশন চেয়ারম্যান।

সকল মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হতে কয়েক দিন লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মরদেহ শনাক্ত হলে পর্যায়ক্রমে দেশে আনা হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।