সক্ষমতা হারাতে বসা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল
2017.06.16
ঢাকা

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে আরও একটি টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কেবল টার্মিনাল নির্মাণের চেয়ে রাজধানীতে বিকল্প বিমানবন্দর নির্মাণ অতি জরুরি।
নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ২০১৮ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে। তবে ইতিমধ্যেই চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে টার্মিনাল নির্মাণ কাজের পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি।
“তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শেষ হলে বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ২০ মিলিয়ন এবং কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবে,” বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
প্রসঙ্গত দেশের এই প্রধান বিমানবন্দরটিতে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। বিমানবন্দরের বাৎসরিক যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি আট মিলিয়ন এবং কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি দুই লক্ষ টন।
“শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং ইতিমধ্যে সক্ষমতা হারিয়েছে। আগামী বছর নাগাদ যাত্রী হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা হারাবে। এ জন্য আরো একটি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে,” বলেন বিমান পরিবহন মন্ত্রী।
এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
“আগামী বছরের (২০১৮ সাল) এপ্রিল মাসে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আশা করছি ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে,” সাংবাদিকদের জানান সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) চেয়ারম্যান এহসানুল গণি চৌধুরী।
তিনি জানান, এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে তেরো হাজার ছয়শত দশ কোটি ছেচল্লিশ লক্ষ পঁচাশি হাজার টাকা।
নতুন এই টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো।
বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) কামরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন যাত্রীর তুলনায় বোর্ডিং ব্রিজ, চেকিং কাউন্টার এবং ইমিগ্রেশন কাউন্টারের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল।”
“এই সমস্যা এত প্রকট যে, এর জন্য অনেক সময় ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়। এমন অবস্থায় নতুন টার্মিনাল নির্মাণ সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ,” বলেন তিনি।
কামরুল বলেন, “এখন ফ্লাইট ওঠানামার সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে যাত্রী সংখ্যাও। তাই নতুন টার্মিনাল নির্মাণ যাত্রীদের ভোগান্তি কমাবে।”
কেমন হবে তৃতীয় টার্মিনাল
গত ১১ জুন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) সঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটির কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন উপস্থিত ছিলেন।
এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; জাপানের নিপ্পন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট, বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড।
যৌথভাবে এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় টার্মিনালের বিস্তারিত ডিজাইন রিভিউকরণ, মূল নির্মাণকাজের দরপত্রের খসড়া থেকে শুরু করে টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকি করবে।
এসব পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনকে পাঁচ শ সত্তর কোটি উন আশি লাখ চুয়াত্তর হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে বলে জানা যায়।
পরে এহসানুল গণি বেনারকে জানান, “তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। আর নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স হবে ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটারের। থাকবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটারের পার্কিং অ্যাপ্রোন।”
এ ছাড়া র্যাপিড এক্সিট অ্যান্ড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে এবং তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে মূল এয়ারপোর্টের সড়কের কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।
সমন্বিত উন্নয়ন প্রয়োজন
তবে সাধারণ যাত্রীদের সুবিধাগুলো সমন্বয় করে এ ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।
তিনি বেনারকে বলেন, “এখন মানুষের চাপ বাড়ছে। তার সঙ্গে যোগানটা ম্যাচিং না করলে ভবিষ্যতে উন্নয়ন কমে যাবে। টার্মিনাল বড় করার মধ্যে ক্রেডিট নেই। বর্তমান এয়ারপোর্টেই তো মানুষ সরাসরি যেতে পারে না।”
তাঁর মতে, “বাংলাদেশের একমাত্র গেটওয়ে ঢাকার এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির একমাত্র রানওয়েকে আরও ব্যস্ত করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। এ কারণেই রাজধানী শহরে অন্তত একটি বিকল্প বিমানবন্দরের ব্যবস্থা থাকে। এই (তৃতীয় টার্মিনাল) প্রকল্পটি না করে দরকার ছিল প্রস্তাবিত (নতুন) বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরটি তৈরি করা। যদিও সেটা হতেও ২০-২৫ বছর লাগবে।”
“তাই চাপ সামলাতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে মেট্রো, ডেডিকেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সমন্বয় থাকতে হবে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই যাত্রীরা যানজটে পড়ে যায়, তখন হয়ত আরও বেশি চাপ বাড়বে, আরও বেশি সমস্যা হবে। এ ধরনের উন্নয়ন অযৌক্তিক উন্নয়নে পরিণত হবে।”
এয়ারপোর্ট এলাকায় নির্মাণাধীন কয়েকটি বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সমালোচনাও করেন শামসুল হক।