গুলশান হামলার ঘটনায় ৪ অস্ত্র সরবরাহকারী গ্রেপ্তার

জেসমিন পাপড়ি
2016.11.03
ঢাকা থেকে
161103-BD-arms-supplier-620.jpg গুলশানে জঙ্গি হামলার পর ঘটনাস্থলে র‍্যাবের প্রস্তুতি। জুলাই ০১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ভয়াবহ গুলশান হামলায় ব্যবহার করা গ্রেনেড তৈরির কাঁচামাল ও পিস্তল সরবরাহকারীদের গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ওই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ‌্য জানতে আটককৃত প্রত্যেককে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত।

নজিরবিহীন এই জঙ্গি হামলার সত্য উদঘাটন হতে যাচ্ছে বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকেরা। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে একের পর এক হামলা সংশ্লিষ্টরা নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়ায় এই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট বুধবার রাতে গুলশান হামলায় ব্যবহার করা গ্রেনেড তৈরির কাঁচামাল ও পিস্তল সরবরাহকারী চারজনকে ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

এরা হচ্ছে; মো. সেলিম মিয়া (৪৫), মো. আবু তাহের (৩৭), মিজানুর রহমান (৩৪) ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডা. তৌফিক (৩২)।

ডিএমপির উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই জেএমবির সক্রিয় সদস্য এবং সীমান্তে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আটকৃতদের কাছ থেকে হাতে তৈরি গ্রেনেড বানানোর মূল উপকরণ ৭৮৭টি ডেটোনেটর ও একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পরদিন বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। আদালত তাদের প্রত্যেককে তিন দিন হেফাজতের আদেশ দেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন পুলিশের কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন।

তবে শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি।

ডিএমপির কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, আটক চার ব্যক্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

পুলিশের মতে, নব্য জেএমবির ব্যবহার করা গ্রেনেডের ডেটোনেটর, জেল ও অস্ত্র ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হতো।

মাসুদুর রহমান জানান, “আটক মিজানুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেএমবির নেতৃত্বে রয়েছেন। বড় মিজান ওরফে ছোট মিজান ওরফে তারা নামেও সে নিজেদের মধ্যে পরিচিত।”

তিনি জানান, “এসব অস্ত্রশস্ত্র তিনিই গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী ও মারজানের কাছে পৌঁছে দেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।”

পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয়ে আরও তথ‌্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে পুলিশ।

চলতি বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। জঙ্গিরা তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। যাঁদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। পুলিশি হামলায় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়।

পরে নারায়নগঞ্জ, কল্যাণপুর, আজিমপুরসহ কয়েকটি স্থানে অভিযানে নিহত হয় গুলশান হামলার হোতাসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গি। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে গুলশান হামলার প্রকৃত অপরাধীরা আটক হওয়ায় পুলিশের ভূমিকার প্রসংশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক নূর খান বেনারকে বলেন, “ইতিমধ্যে গুলশান হামলার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। অস্ত্র ও গ্রেনেডের কাঁচামাল জোগানদাতাদের যখন পাওয়া গেলো, তখন আমরা বলতে পারি ঘটনাটি উদঘাটন হওয়ার পথে।”

বাগেরহাটে চার জেএমবি সদস্য আটক

গত বুধবার রাতে বাগেরহাট শহরে এক অভিযানে সন্দেহভাজন চার জেএমবি সদস্যকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; সাতক্ষীরা জেলা সদরের মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে তোতা (২৪) ও সাইফুল ইসলাম (৩৬), কদমতলার  মোরশেদ আলম (২০) ও পিরোজপুর জেলার জহিরুল ইসলাম (২২)। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ।

স্থানীয় পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বেনারকে জানান, “দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালাতে পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তারা জড়ো হয়েছিল।”

এই চারজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে চারটি মামলা করেছে বাগেরহাট পুলিশ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।