ফখরুল-আব্বাস জেলে, ঢাকায় সমাবেশের জন্য জড়ো হচ্ছেন বিএনপি সমর্থকরা
2022.12.09
ঢাকা

আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২২। ইস্টার্ন সময় সকাল ১১:২৫
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর বিরোধী দল বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দিলেও গ্রেপ্তারের কারণে সেই সমাবেশে থাকতে পারছেন না দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অন্যতম শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার বিকেলে যখন আদালত থেকে এই দুই বিরোধী নেতাকে জেলে পাঠানো নির্দেশ দেয়া হয়, সেই সময় শনিবারের সমাবেশের জন্য পাওয়া রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমবেত হতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা, উসকানি ও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে মির্জা ফখরুল ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় তাঁদের মহানগর হাকিম আদালত কারাগারে পাঠায় বলে গণমাধ্যমকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মোঃ তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিমের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দুই বিএনপি নেতাকে আটক রাখার আবেদন করা হয়, আদালত তা মঞ্জুর করেন।”
বিএনপির পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হলেও তা খারিজ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।
বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিএনপি কর্মী নিহত ও শতাধিক আহত হন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে ফখরুল ও আব্বাসকে তাঁদের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে বেনারকে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন।

‘সমাবেশস্থল ইতোমধ্যে ভরে গেছে’
ফখরুল ও আব্বাসের গ্রেপ্তারের পর দলের নীতিনির্ধারণী শীর্ষ ফোরাম স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকের পর শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “শনিবার সকাল ১১টায় গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হবে।”
ফখরুল সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল, কিন্তু তাঁকে জেলে পাঠানোর পর কাকে সেই ভূমিকায় দেখা যাবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, “কালকের সমাবেশেই দেখা যাবে কে, কোন দায়িত্ব পালন করছেন।”
ফখরুল ও আব্বাসকে নিজ নিজ বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার করে জানিয়ে মোশাররফ বলেন, “তাঁরাসহ এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”
এর আগে ডিএমপি কার্যালয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বেনারকে বলেন, “ঢাকায় গণসমাবেশ যে কোনো পরিস্থিতিতে করার জন্য বিএনপি প্রস্তুত। সমাবেশস্থল ইতোমধ্যে ভরে গেছে। আমরা আশা করছি ঢাকার সাধারণ মানুষ সরকারকে তাঁদের উপস্থিতির মাধ্যমে লাল কার্ড দেখাবে।”
তিনি বলেন, শুক্রবারের সমাবেশে থেকে বিএনপি আগামী দিনে সরকার পতন আন্দোলনের রূপরেখা দেবে।
এদিকে ঢাকায় ঢোকার মুখে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুলনা, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় ঢোকার প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ীতে শুক্রবার সকাল থেকে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে নানা বাধা উপেক্ষা করে বিএনপি ঢাকার বাইরের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ইতোমধ্যে ৯টি গণসমাবেশ শেষ করেছে। এসব সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটিয়েছে দলটি।
তবে শুরু থেকেই ঢাকার সমাবেশের স্থান নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চাইলেও সরকার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলে আসছিল।
বিএনপি সরকারের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা তৈরি হয়। বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন, এরপর পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়।
অন্যান্য দলের প্রতিবাদ
সরকার ও পুলিশ কর্তৃক বিরোধী মত দমনের পথ পরিহার করা, শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া, বিএনপি অফিসে হামলা, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবিতে শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে সংবাদ সম্মেলনে বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, দাবি আদায়ে আগামী ১৩ ডিসেম্বর সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দিবস পালনের কর্মসূচি করবে বাম জোট।
এদিকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি আলাদা সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা দাবি করেছেন সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশ থেকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, “সরকার বলেছে কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। এর মানে হচ্ছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাই এই সরকারকে বিদায় করার বিকল্প নেই।”
বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কাদের
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অযাচিত মন্তব্য না করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “এত বড়ো বড়ো কথা বলেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত! বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না। আমরা বন্ধুত্ব চাই। অতীতে ‘৭৫, ‘৭১-এর মতো অনেক বেদনা আছে। তারপরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। এভাবে করলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে। সেটায় কারও লাভ নাই।”
ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক সভায় এসব কথা বলেন।
গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন তিনি। সহিংসতার ঘটনাগুলো তদন্তে সরকারের প্রতি আহবান জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান অ্যামনেস্টির
বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ইয়ামিনি মিশ্রা ওই বিবৃতিতে বলেন, পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়া ঘটনায় প্রমাণ হয় মানুষের জীবনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সম্মানবোধ নামমাত্র।"
বিবৃতিতে বলা হয়, "সরকার মানুষের জীবনের প্রতি খুব কমই গুরুত্ব দেয় এবং এসব আক্রমণ এই বার্তাও দেয় যে, যারা মানবাধিকার চর্চা করার সাহস দেখাবে, তাদের ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।"
............
আপডেট: প্রতিবেদনটিতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের গ্রেপ্তার পরবর্তী তথ্য সংযোজন করা হলো।