আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষ
2016.04.06

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলছে, জনস্বাস্থ্য হুমকির লড়াইয়ে বাংলাদেশ কোন মৌলিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সংগঠনটির নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির ২ কোটি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।
প্রতিবেদনে আশংকা করা হয়েছে, সরকার এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত পানি পানে বিরত রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, যা কিনা ক্যানসার ও অন্যান্য অসুখের কারণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, এই ২ কোটি মানুষ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আট ভাগের একভাগ।
আজ বুধবার এইচআরডব্লিউর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছর আনুমানিক ৪৩ হাজার মানুষ মারা যায় আর্সেনিক দূষিত পানি পান করে অসুস্থ হওয়ার কারণে।
“বাংলাদেশ তার লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্সেনিক মুক্ত খাবার পানি সরবরাহে কোন সুস্পষ্ট মৌলিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না,” বলেছেন রিচার্ড পিয়ারসহাউজ, যিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন সিনিয়র গবেষক।
৭৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তিনি বলছেন, সরকার এমন ভাব করছে যেন সমস্যার অধিকাংশই সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু সরকার ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দাতারা এগিয়ে না আসলে কোটি কোটি বাংলাদেশি আর্সেনিক সংক্রান্ত প্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যাবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ঢাকায় প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশির ভাগ হস্তচালিত অগভীর নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
এই প্রতিবেদন তৈরীর সময় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিভিন্ন গ্রামের আর্সেনিক দূষণের শিকার ১৩৪ জন বাসিন্দার সাথে কথা বলেছে।
গবেষনায় দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়কেরা পাঁচটি গ্রামে ঠিকঠাকভাবে নলকূপ স্থাপন করেছে। এই পাঁচটি গ্রামের মধ্যে আছে দক্ষিণের বরিশাল জেলার বালিয়া গ্রাম, কুমিল্লার ইরুআইন; উত্তর পশ্চিমের পাবনা জেলার রূপপুর এবং কেন্দ্রীয় ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিলমামুদপুর ও তিলচান্দি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারের বসানো সোয়া লাখ নলকূপের ওপর গবেষণা করেছে, যেগুলো ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে স্থাপিত। এই সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার প্রায় বিশ বছর পর এখন বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ভূগর্ভস্থ পানিতেও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, পাঁচ শতাংশ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক দূষণ জাতীয় মান সীমার ওপরে ।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক দাতা ও বেসরকারি সংগঠনদের সাথে ১৯৯০ সালের শেষদিক থেকে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু এইচআরডব্লিউ বলছে, এই প্রচেষ্টা ২০০৬ সাল থেকেই ব্যাহত হয়ে আসছে। সমস্যাটাকে জটিল করছে আর্সেনিক-প্রশমন প্রকল্পে মান নিয়ন্ত্রণের অভাব।
এ ছাড়া কিছু স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিবিদ এবং তাদের সমর্থক ও মিত্ররা নিজেদের প্রয়োজনে নলকূপ বসানোর স্থান ঠিক করে।
“নতুন নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে রাজনীতি প্রধান্য পায়,“ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
“তারা তাদের রাজনৈতিক মিত্র, সমর্থক ও খুব ঘনিষ্ঠদের গভীর নলকূপ দেয়। এটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। রাজনীতিবিদেরা বেশিরভাগ সময় মানুষের সত্যিকারের প্রয়োজনকে গণ্য করে না,” জানান ওই কর্মকর্তা।
খাদ্র নামে রূপপুর গ্রামের একজন কৃষক, হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন যে, বহু সরকারি নলকূপ ব্যক্তি মালিকানা বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে।
ওই কৃষক বলেন, “ওই সব মালিকেরা সরকারি লোকজনদের ঘুষ দিয়ে কিংবা তাদের রাজনৈতিক সূত্রে এগুলো পেয়েছে।”