নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সড়কটি প্রশস্ত করবে চীনা কোম্পানি

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.02.10
ঢাকা
নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সড়কটি প্রশস্ত করবে চীনা কোম্পানি কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ তদারকি করছেন চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রোর একজন শ্রমিক। ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা কোম্পানিগুলো। ৩০ অক্টোবর ২০২১।
[কামরান রেজা চৌধুরী/বেনারনিউজ]

বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ জেলার পঞ্চবটি ও মুন্সিগঞ্জ জেলার মুক্তারপুর সড়কটি দোতলা ও প্রশস্ত করার কাজ দেয়া হয়েছে দুই চীনা কোম্পানিকে।

অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রায় ১০ কিলোমিটার সিঙ্গেল সড়কটি প্রশস্ত ও দোতলা করা সংক্রান্ত সেতু বিভাগের প্রস্তাবটি পাশ হয়।

বিষয়টি বেনারের কাছে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামশুল আরেফিন।

তিনি জানান, কাজ পেয়েছে দুই চীনা কোম্পানি শ্যানডং ইউকিয়াও গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ লিমিটেড।

প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ২০৬ কোটি টাকার বেশি, যা ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

এই প্রকল্পের আওতায় ১৫১ মিটার সেতু প্রশস্ত করা হবে এবং কাজ শুরুর ৩৬ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে সামশুল আরেফিন জানান।

এই প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেয়া চার কোম্পানির মধ্যে তিনটিই চীনা প্রতিষ্ঠান। তারাই প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। একমাত্র দেশীয় কোম্পানি এনডিই হয়েছে চতুর্থ।

সভায় উপস্থাপিত কাগজপত্র অনুযায়ী, বর্তমানে ওই সড়কের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা সংকীর্ণ এবং এর ফলে এই সড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকে।

মুক্তারপুর ও পঞ্চবটি এলাকায় পাঁচটি সিমেন্ট কারখানা, তিনটি হিমাগার ও বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে প্রায় এক লাখ শ্রমিক চলাচল করেন। এই সড়কটি দোতলা করে প্রশস্ত করা হলে সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি পাবে।

তিনি জানান, “আমরা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করি এবং চীনা কোম্পানি কাজ পেয়েছে। চারটি কোম্পানি রেসপন্সিভ ছিল। এর মধ্যে তিনটি চীনা এবং একটি স্থানীয়।”

সচিব জানান, দরপত্র মূল্যায়নে প্রথম হয় শ্যানডং ইউকিয়াও গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ লিমিটেড। এরপর চীনের সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন এবং তৃতীয় হয় চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন।

দেশীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স-ম্যাক্স-মীর আখতার চতুর্থ দরদাতা হয়।

সাম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন সঠিকভাবে হয় না

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে যে সকল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেগুলোর প্রায় অধিকাংশই বাস্তবায়ন করছে চীনা কোম্পানিগুলো।

তবে চীনারা সঠিক সময়ে এবং পূর্ব নির্ধারিত দরে কাজ শেষ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে শুরুতে যে দর দিয়ে কাজ পায় চীনা কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড সেটি তারা দফায় দফায় বৃদ্ধি করে। একই সাথে বাস্তবায়নের সময়ও বৃদ্ধি করা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সামশুল হক বেনারকে বলেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র অনুযায়ী চীনা কোম্পানিগুলো যে কারিগরি এবং আর্থিক সক্ষমতা দেখায় তার ধারে কাছে কোনও কোম্পানি থাকে না। সে কারণে দেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক সব ধরনের আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানি হিসাবে তারা কাজ পেয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “চীনারা বাংলাদেশে অল্প দামে কাজ নেয়। এরপর তারা কাজের সময় এবং দর বৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়ার সাথে আমাদের দেশীয় কিছু সরকারি কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা চীনাদের কাছ থেকে লাভবান হয়ে থাকেন।”

অধ্যাপক সামশুল আলম বলেন, “চীনারা এমন পর্যায়ের কোম্পানি নয় যে তারা নিজেদের মান নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। তাদের জন্য আমাদের দিক থেকে শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। তারা বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বৃদ্ধি করতে সুযোগ পায় মূলত আমাদের কারণে।”

কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ সাম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনগুলো সঠিকভাবে করা হয় না। সেখানে প্রকল্পের অনেক কিছু থাকে না। যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় তখন দেখা যায় কিছু বাড়তি কাজ করতে হবে এবং তখনই কোম্পানিগুলো বাড়তি টাকা আদায় করে নেয়।”

অধ্যাপক সামশুল আলম বলেন, “চীনা কোম্পানিগুলোর কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিতে গেলে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনগুলো সঠিকভাবে করতে হবে। অন্যথায় চীনারা তাদের মতো অনৈতিক কাজগুলো করতেই থাকবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।