যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী: চীন আসে ‘ঝুড়িভর্তি টাকা’ নিয়ে
2022.04.05
ওয়াশিংটন ডিসি

চীনের সাথে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও বাংলাদেশ কেন দুটো দেশের সাথেই সুসম্পর্ক রেখে চলে তার ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস ইন্সটিটিউট অব পিস-এর এক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের জাতির পিতা নির্দেশিত মূল নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি- সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথেই বিদ্বেষ নয়। তিনি এও বলেছেন যে, প্রতিবেশীদের সহায়তা করো, কারণ প্রতিবেশীরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের সহায়তার কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সমর্থন না করলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে “ঝুড়িভর্তি’ অর্থায়ন নিয়ে এগিয়ে এসেছে দেশটি।
এর আগে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে দেশটিকে ধন্যবাদ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন শুরু থেকেই “সুসময় ও দুঃসময়, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের বন্ধু ছিল।”
প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রও ছিল পাকিস্তানের সমর্থক, দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক তৈরি হয় স্বাধীনতার পরে।
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কঠোর বন্ধনে আবদ্ধ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনেক ভারতীয়ও রক্ত দিয়েছেন, আমরা সেসব ভুলতে পারি না।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি উদ্বাস্তু বাংলাদেশিকে আশ্রয় দেবার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু ভারত সরকার নয়, সাধারণ মানুষও আমাদের সমর্থন করেছেন, সহায়তা করেছেন, আমরা কখনো সেসব ভুলতে পারি না।”
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সাথে দেশটির বর্তমান সম্পর্কের ধরণকে আখ্যায়িত করেন “সোনালি অধ্যায়” হিসেবে।
“ভারতের সাথে আমাদের সাম্প্রতিক সকল জটিল সমস্যা আমরা সমাধান করেছি সংলাপের মাধ্যমে, কখনো একটা বুলেটও ছোঁড়া হয়নি কোথাও।”
সুসম্পর্ক থাকার পরেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের পক্ষে বেশি সহায়তা করা সম্ভব হয় না বলে জানান আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে অন্য প্রতিবেশী চীন। চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভেটো দিয়েছিল স্মরণ করিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সেগুলোও ভুলি না।”
“কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সহায়তা প্রয়োজন। এবং তাঁদের (চীন) রয়েছে ঝুড়িভর্তি টাকা। তারা ঝুড়িভর্তি টাকার সাথে সাশ্রয়ী ও শক্তিশালী প্রস্তাব নিয়ে আসে।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বর্তমান বেশিরভাগ মেগা প্রজেক্ট চীনের অর্থায়ন ও সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন।
নিরপেক্ষতা
বাংলাদেশ সবার সাথে নিরপেক্ষ সম্পর্ক রেখে চলে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“ভারত ও চীনের মধ্যে তাদের নিজস্ব সমস্যা রয়েছে, তাদেরগুলো তাদেরই থাকুক। আমরা সেসবে নাক গলাই না।”
বাংলাদেশ বরাবর তার “নীতিগত অবস্থানে” থাকে জানিয়ে নীতিটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সেটি হলো, গণতন্ত্র, ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আমরা আপোষ করি না। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে, আমরা (সহায়তা) নেই।”
“এমনকি চীনের কাছ থেকে ভারতও টাকা নেয়। তাদের ভেতর সুসম্পর্ক না থাকলেও তারা (ভারত) চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়- এটা খুবই আজব দুনিয়া,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একই কথা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও, চীনের সাথে দেশটির উত্তেজনা থাকতে পারে, তা থাকুক। সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। চীনের সাথে আমরা সম্পর্কিত শুধু আমাদের উন্নয়ন উদ্যোগগুলোর ক্ষেত্রে।”
র্যাবে তরুণরা আর ‘আগ্রহী হচ্ছে না’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সোমবারর বৈঠকে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না; মডারেটরের এমন প্রশ্নরে উত্তরে বিষটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি আমি সব বৈঠকেই উত্তাপন করি।”
র্যাবের মধ্যে হয়তো কিছু বাড়াবাড়ি ছিল, কিন্তু “সময়ের সাথে সাথে এটি পরিপূর্ণ হয়েছে,” জানান তিনি।
র্যাব সদস্যদের আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়া রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এইসব কারণে বাহিনীটির অন্তত ২৭০ জন সদস্যকে হয় চাকরি হারানো না হয় পদাবনতি ভোগ করতে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ‘সঠিক নয়’ দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র্যাবের করণে “বাংলাদেশে এখন আর কোনো সন্ত্রাসবাদ নেই।” কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে “তরুণরা এখন আর র্যাবে যোগদানে আগ্রহী হচ্ছে না।”