আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে: সময় শেষ হলেও চীন টাকা দেয়নি

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.06.01
ঢাকা
আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে: সময় শেষ হলেও চীন টাকা দেয়নি নির্মাণাধীন প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ইতালি-থাই ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড ১ দশমিক ০৬২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকসন করপোরেশন সঙ্গে। ৮ মার্চ ২০২১।
[বেনারনিউজ]

ঢাকাকে যানজট মুক্ত ও ঢাকার সাথে ৩০ জেলার সংযোগ সহজ করতে পাঁচ বছর আগে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য চীনা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ এ বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটির ঋণের টাকা ছাড় করেনি চীন সরকার। এমনকি প্রকল্পের ডিজাইনও চূড়ান্ত করেনি চীনা সরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)।

এই প্রেক্ষাপটে বুধবার প্রকল্পের সময় ও খরচ বৃদ্ধি করে প্রকল্পটির সংশোধন অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহেদুর রহমান বুধবার বেনারকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব‌্যয় ও সময় বৃদ্ধি সংক্রান্ত সড়ক বিভাগের প্রস্তাবনাটি অনুমোদিত হয়।

তিনি বলেন, বুধবার অনুমোদিত প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রকল্পের বর্তমান খরচ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার বেশি। ২০১৭ সালের মূল প্রস্তাবনায় খরচ নির্ধারিত ছিল ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৫২ কোটি টাকা।

একইসাথে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কারণ চীনা নীতি পরিবর্তন

২০১৭ সালে এই প্রকল্পটির প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের জুন মাসে।

কিন্তু চীন সরকারের সাথে ঋণ চুক্তি সম্পাদিত হতেই সময় লেগে যায় চার বছরের বেশি। গত বছর অক্টোবরে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও চীনা সরকারের প্রতিনিধি।

তবে এখনও প্রকল্পের নকশাই নির্মাণ করেনি সিএমসি।

২০১৭ সালে প্রকল্পের শতভাগ অর্থায়ন চীন সরকারের করার কথা ছিল বলে বুধবার বেনারকে জানান আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান।

“তবে ২০১৮ সালে তারা তাদের বৈদেশিক ঋণ নীতিমালা পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা কোনো প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৮৫ ভাগ অর্থায়ন করতে পারবে। সেই হিসাবে চীনা এক্সিম ব‌্যাংক এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৮৫ ভাগ অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে,” জানান শাহাবুদ্দিন খান।

চীনের নীতি পরিবর্তনের কারণে চীনা এক্সিম ব‌্যাংক টাকা ছাড় করতে পারেনি, যার ফলে এতদিন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়নি বলে জানান তিনি।

“আজকে একনেক অনুমোদনের পর অর্থায়নের সমস‌্যা আর রইলো না। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি কাজে গতি পাবে,” বলেন প্রকল্প পরিচালক।

এই প্রকল্পের ঋণের সুদ হার দুই ভাগ বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে চীন সরকারের মন্তব‌্যের জন‌্য ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে যোগাযোগ করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

বেনারের হাতে একনেক সভায় উপস্থাপিত প্রকল্পের কাগজপত্র রয়েছে। এতে প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, মোট খরচ থেকে সরকার যোগান দেবে প্রায় সাত হাজার ৮৬১ কোটি টাকার বেশি। মূল প্রস্তাবনায় সরকারের প্রদত্ত অংশের পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।

এ ছাড়া চীনা এক্সিম ব‌্যাংকের প্রায় ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল। বুধবারের সংশোধনীর পর সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৬৯২ কোটি টাকায়।

একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই প্রকল্পের খরচ ও বাস্তবায়নকাল আবার বৃদ্ধি করা হবে কি না-সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় পরিকল্পনা কমিশনের সদস‌্য (ভৌত অবকাঠামো) মো. মামুন-আল-রশীদের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি ইপিসি শর্তে নির্মাণ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত থেকে শুরু করে তারা সব কাজ বাস্তবায়ন করবে। সুতরাং, বুধবার অনুমোদিত বাজেটের মধ‌্যেই তাদের কাজ শেষ করতে হবে।

একনেকে উপস্থাপিত প্রকল্পের কাগজপত্র অনুযায়ী, সাভার রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল এলাকার কাছে অবস্থিত শ্রীপুর থেকে বাইপাইল, আশুলিয়া ও আব্দুল্লাহপুর হয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

বর্তমানে মূল রাস্তার ওপর দিয়ে একটি সড়ক নির্মিত হবে। ফলে যানবাহন সহজেই গাজীপুরের চন্দ্রা হয়ে বাম দিকে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় যেতে পারবে। নিচের সড়কে স্থানীয় যানবাহনের কারণে যানজট হবে না। একইভাবে চন্দ্রা থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ অন্যান্য জেলায় যাওয়া যাবে।

প্রস্তাবিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বর্তমানে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে। দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্ত হলে ঢাকা শহরের যানজট নিরসন হবে বলে প্রকল্পের কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, ঢাকার সাথে ৩০ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট বহুলাংশে কমে আসবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।