ঘুষ লেনদেন: ডিআইজি মিজানের ৩ ও দুদক পরিচালক বাছিরের ৮ বছর কারাদণ্ড

জেসমিন পাপড়ি
2022.02.23
ঢাকা
ঘুষ লেনদেন: ডিআইজি মিজানের ৩ ও দুদক পরিচালক বাছিরের ৮ বছর কারাদণ্ড ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে সাজা ঘোষণার পর দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
[বেনারনিউজ]

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বেনারকে জানান, এনামুল বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি মুদ্রা পাচার আইনে ৫ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৮০ লাখ জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে খাটতে হবে বলে বাছিরকে সব মিলিয়ে ৫ বছর জেল খাটতে হবে।

তিনি বলেন, “ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান খন্দকার এনামুল বাছির। সেই অভিযোগ থেকে তাঁকে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য বা হিসেবে গরমিল করে দেয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে চুক্তি হয়। সেই প্রেক্ষিতে বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন মিজান।”

মোশাররফ হোসেন জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় আদালত এই দণ্ড দেন। দুজনের ক্ষেত্রেই হাজতবাসের সময় বাদ যাবে।

রায় ঘোষণার আগে মিজান ও বাছিরকে পৃথক কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে বেনারকে জানান বাছিরের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান। তবে ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, “ডিআইজি মিজান চার বছর ধরে কারাগারে আছেন। তাই স্বাভাবিকভাবে তাঁর সাজা খাটা শেষ হয়েছে।”

‘একটা ঘটনা দিয়ে আশাবাদী হতে পারি না’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বেনারকে বলেন, এই রায় অত্যন্ত ইতিবাচক। এটা দিয়ে দুদক এবং পুলিশ কর্মকর্তারা এই বার্তা পেলো যে, দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। দুর্নীতি করলে সে যত বড়োই হোক, তাঁকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”

“দুদকের একজন পরিচালক ও পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার ব্যক্তিকে দুর্নীতির দায়ে সাজা দিতে পারা দুদকের বড়ো একটি অর্জন। এটা ধরে রাখতে পারলে দুর্নীতি দমনে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারব। হয়তো এক সময় আমরা শতভাগ দোষীদের সাজা দিতে সক্ষম হব,” তিনি বলেন।

তবে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “আমাদের দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজমান। আমাদের দেশে সেগুলোরই বিচার হয় যেগুলো ব্যাপক আলোচিত–সমালোচিত হয় কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির স্বার্থ থাকে।”

“ডিআইজি মিজান ও বাছিরের ঘটনাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় শেষমেশ এর বিচার হলো। এ ছাড়াও আরো বহু অন্যায় হয়। দুটো প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে,” দাবি করেন তিনি।

“এই একটা ঘটনা দিয়ে আমরা আশাবাদী হতে পারি না। তবে নাগরিকেরা যদি সোচ্চার হন, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বা চাপ সৃষ্টি করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন আসবে,” মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার।

যেভাবে অপরাধ প্রকাশ পায়

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে ২০১৯ সালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এর কয়েকমাস পরে দুদক মিজানের সম্পদের তদন্তে নামে। একসময় সেই তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের তৎকালীন পরিচালক এনামুল বাছির।

সেই তদন্ত চলাকালেই ডিআইজি মিজান দাবি করেন, দুদক কর্মকর্তা বাছির তাঁর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। মিজান তাঁদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন। সেটি প্রচার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করেন বাছির।

এরপর ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তিনি। গত বছর ১৮ মার্চ অভিযোগ গঠন করে তাঁদের বিচার শুরু করে আদালত। এরপর ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। আদালত মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য শোনে।

যুক্তিতর্ক শুনানির আগে এ বছরের ৩ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছির। পরে ১২ জানুয়ারি মিজান ৬ পৃষ্ঠার এবং এনামুল বাছির ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন। যাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়রানি করতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তারা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।