লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
2022.04.15
ঢাকা

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে ওই থানার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) শুক্রবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মৃত রবিউল ইসলাম (২৫) সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাজীচওড়া গ্রামের দুলাল খানের ছেলে এবং এই ঘটনায় প্রত্যাহার করে নেয়া এসআইয়ের নাম হালিমুর রহমান বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহা আলম।
তবে রবিউলের মৃত্যু নির্যাতনেই হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে শাহা আলম বলেন, “আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি, সেটি পাওয়া গেলে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে কীভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক এলাকায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় ‘জুয়ার আসরে’ ধাওয়া করে বৃহস্পতিবার দুপরে দুই জনকে আটক করে পুলিশ।
এর মধ্যে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় রাত সোয়া ১১টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে রবিউলের মৃত্যু হয়।
রবিউলের মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে রাত থেকে দফায় দফায় লালমনিরহাট-পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।
এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে অন্তত চার পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানান ওসি শাহা আলম।
পুলিশ ‘বেদম মারপিট করে’
স্থানীয় সাংবাদিক রেজাউল করিম বেনারকে বলেন, উপজেলার হিরামানিক এলাকার বৈশাখী মেলায় জুয়া খেলা চলছিল। এমন খবরে পুলিশ মেলায় অভিযান চালালে জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জুয়ায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে মহেন্দ্র নগর কাজীচওড়া এলাকার দুলাল খানের ছেলে রবিউল খান এবং দক্ষিণ হিরা মানিক এলাকার মৃত রসনির ছেলে পোল্লাদ রায়কে আটক করে।
“স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আটক দুজনকে পুলিশ ভ্যানে উঠানোর চেষ্টা করলে রবিউল ভ্যানে উঠতে রাজি হননি। পরে তাঁকে ঘটনাস্থলে মারধর করে পুলিশ এবং সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন,” জানান রেজাউল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আটকের পর থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে রবিউল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষণিক স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিউল মারা যায়। নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়।”
রবিউল জুয়ার সাথে জড়িত নয় দাবি করে নিহতের চাচা মনসুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, “বৈশাখী মেলা দেখতে গিয়েছিল রবিউল। পাশে জুয়া চলছিল। পুলিশ জুয়াড়ি ধরতে ধাওয়া করে এবং তারা পালিয়ে যায়। মেলায় ঘুরতে যাওয়া রবিউলসহ দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে রবিউল পুলিশের ভ্যানে উঠতে না চাওয়ায় বেদম মারপিট করে। এতে মাটিতে পড়ে যায় রবিউল।”
এসময় পুলিশের নির্যাতনে রবিউলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে জড়িত এসআই হালিমুর রহমানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এদিকে রবিউলের সাথে আটক পোল্লাদ রায়ের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগে এবং রবিউলের মৃত্যুর ঘটনায় ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি শাহা আলম।
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
পুলিশ হেফাজতে রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই উপজেলার মহেন্দ্রনগরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। সড়ক অবরোধকারীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নির্যাতনকারী পুলিশকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এসময় তারা পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করেন।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অবরোধ থাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে শতশত যানবাহন আটকে পড়ে এবং ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে ঘটনাস্থলে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার্স) আতিকুর রহমান গিয়ে নিহত রবিউল খানের স্বজনদের সাথে কথা বলে দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা অবরোধ তুলে নেন।
গত ৭ জানুয়ারি স্ত্রী হত্যার অভিযোগে হিমাংশু বর্মণ (৩৬) নামে একজনকে আটক করে লালমনিরহাট হাতীবান্ধা থানা পুলিশ। হেফাজতে থাকা অবস্থায় হিমাংশুর মৃত্যু হলে পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে গত বছর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে সাত ব্যক্তির। অপরদিকে চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে গ্রেপ্তারের আগে ও পরে পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন কমপক্ষে তিন জন।