নিখোঁজ ইসলামি বক্তা আদনানকে খুঁজে বের করুন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.06.14
ঢাকা
নিখোঁজ ইসলামি বক্তা আদনানকে খুঁজে বের করুন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকায় নিজের মোবাইল ফোনে আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের ইসলামি বক্তব্যের ভিডিও দেখছেন এক ব্যক্তি। ১৪ জুন ২০২১।
[বেনারনিউজ]

দুই সঙ্গী ও গাড়িচালকসহ তিন দিন ধরে নিখোঁজ অনলাইন ভিত্তিক ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সোমবার এক টুইট বার্তায় অ্যামনেস্টি জানায়, সরকারকে অবশ্যই দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে আদনানসহ চারজনকে খুঁজে বের করতে হবে। সংস্থাটি আরও জানায়, যদি তাঁরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকেন তাহলে অতি দ্রুত তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।

আদনানের ছোট শ্যালক মো. জাকারিয়া বেনারকে বলেন, তাঁরা বৃহস্পতিবার রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দিবাগত রাত আড়াইটার পর ঢাকার গাবতলি থেকে তাঁকে বহনকারী গাড়িটি নিখোঁজ হয়। ওই গাড়িতে আদনান, তাঁর দুই সহযোগী এবং গাড়িচালকসহ মোট চারজন ছিলেন।

“আমার দুলাভাই কোনোদিন রাজনৈতিক বিষয়ে ওয়াজ করেন না। তিনি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। তিনি কোনোদিন সশরীরে কোনো ওয়াজ মাহফিল করেন না। উনি অনলাইনে তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন। উনি আখেরাতের কথা, দ্বীনের কথা প্রচার করেন,” বলেন জাকারিয়া।

তিনি বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না কেন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে বা কারা তাঁকে গুম বা অপহরণ করতে পারে সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই আমাদের।”

তাঁর দুলাভাইকে খুঁজে বের করতে মামলা করার জন্য তাঁর বোন সবিকুন নাহার ঢাকার কয়েকটি থানায় ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো মামলা অথবা সাধারণ ডায়েরি নেয়া হয়নি জানিয়ে জাকারিয়া বলেন, “রংপুর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।”

আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান অনলাইনে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে ইউটিউবে ইসলামি ওয়াজ বিডি নামক চ্যানেলে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন ৬১১ ব্যক্তি।

আরেক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫৮৭ জন গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪৯ জন এখনও নিখোঁজ। অধিকারের মতে, এ বছর প্রথম চার মাসে ১১ জন গুমের শিকার হয়েছেন।

গুমে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ থাকে’ 

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বেনারকে বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, গুম অথবা অপহরণের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ সাধারণত মামলা নিতে চায় না। এর কারণ, কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা থাকার সন্দেহ থাকে।”

তিনি বলেন, “তবে যদি এই ঘটনা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক সংগঠিত না হয়ে থাকে, তাহলে এই চারজন মানুষকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।”

আদনানের নিখোঁজ হওয়া ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের টুইটের ব্যাপারে মন্তব্য চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়রুল ইসলাম সোমবার বেনারকে বলেন, “আদনানের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে, আগামীকাল এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের জানাতে পারব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও আদনানের সমর্থক মো. সোলাইমান ইউটিউবে ইসলামি ওয়াজ বিডি’র এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, সাধারণ মানুষদের মধ্যে কেউ বলছেন আদনানকে গুম করা হয়েছে অথবা তাঁকে আটক করা হয়েছে। এই দুটির কোনো একটি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আদনানের ইসলামি বক্তব্যের কারণে ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল বলে জানান সোলাইমান।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “যখনই কোনো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন মানুষ ধরে নেয় যে তাঁকে গুম করা হয়েছে এবং সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘিরে সন্দেহ পোষণ করা হয়।”

“এর কারণ অতীতে অনেকগুলো গুম-খুনের সাথে সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। সে কারণে জনসাধারণের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ,” বলেন মিজানুর রহমান।

তাঁর মতে, “সরকার যদি গুম-খুনের সাথে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো তাহলে আজকে মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দোষারোপ করত না।”

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘিরে এই ধারণার অবসান ঘটাতে হবে। এ জন্য কোনো অভিযোগ আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই এই ধারণার অবসান হবে,” বলেন অধ্যাপক মিজান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।